কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের প্রতিবাদে বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচি পালন করছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেল ৩টা থেকে তারা সড়ক অবরোধ শুরু করেন। সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করে আজকের মতো কর্মসূচি স্থগিত করার কথা রয়েছে।
আগামীকাল আপিল বিভাগের শুনানি শিক্ষার্থীদের দাবির বিপক্ষে গেলে দিনব্যাপী কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটাপদ্ধতি পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে শুনানির জন্য দিন ধার্য হয়েছে আগামীকাল বুধবার (১০ জুলাই)।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে কোটা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডসহ স্লোগান দেন।
আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে বরিশাল–কুয়াকাটা–ঢাকা মহাসড়কের যান চলাচল। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছেন দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ রুটের গাড়ির যাত্রীরা।
শিক্ষার্থীদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই মন্তব্য করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, 'প্রতিবন্ধী ও আদিবাসী কোটা থাকতে পারে। এছাড়া আর কেউ পিছিয়ে পড়া নেই যে, তাদের কোটায় চাকরি দিতে হবে।'
'কোটায় চাকরি দিয়ে সাধারণ আর অসাধারণ বিভেদ করা হচ্ছে। অথচ মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষ্যম্যের বিরুদ্ধে,' বলেন এ শিক্ষার্থী।
আরেক শিক্ষার্থী রাখী বলেন, 'আগামীকাল আপিল বিভাগের শুনানিতে রায় কোটার পক্ষে গেলে আরও কঠোর ও লাগাতার আন্দোলন শুরু হবে।'
আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করে ঘরে ফিরবেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। সেই রাষ্ট্রে ৫৬ শতাংশ কোটা সাধারণ মানুষকে কটাক্ষ করা ছাড়া আর কিছু না।'
আন্দোলনকারীরা ঘোষিত চারদফা বাস্তবায়ন না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মেট্রোপলিটন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, যেকোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে।
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন।
এ সময় রিট আবেদনকারীরা বলেছিলেন, ৯ম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডের জন্য ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিলুপ্ত করে ১৪ থেকে ২০তম গ্রেডে রাখা হয়েছে, যা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে অপমান করার শামিল।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টের রুলে ঐ পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না — সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
পরবর্তীকালে গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। বলা হয়, সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনরায় বহাল থাকবে।