ইফতারি নিয়ে বাসায় ফেরা হলো না, রাস্তায় বের হতেই গুলিবিদ্ধ হন তাজুল
তাজুল ইসলাম (৫৮) গত ১৮ জুলাই আশুরার রোজা রেখেছিলেন। সন্ধ্যায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইফতার করবেন- এমনটাই ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু সেটি আর পূরণ হয়নি। ইফতার কিনে বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরা আজমপুর এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন তাজুল।
তাজুল কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার উত্তর শীলমুড়ি ইউনিয়নের গামারোয়া গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে। উত্তরা আজমপুর এলাকায় রেন্ট-এ কারের ব্যবসায় জড়িত ছিলেন তিনি। তার একটি পুরনো মাইক্রোবাস রয়েছে। সেটি ভাড়া দিয়ে যে টাকা পান, তা দিয়েই চলত সংসার।
তাজুলের একমাত্র ছেলে রেদোয়ান আহমেদ সিয়াম বলেন, 'ওইদিন বাবা আশুরার রোজা রেখেছিলেন। সারাদিন তিনি উত্তরায় রেন্ট-এ কারের পাশে একটি মসজিদে ছিলেন। বিকেলে ইফতারি নিয়ে বাসায় ফিরবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু বাবা আর ফেরেননি। সংঘর্ষের সময় কোত্থেকে থেকে গুলি এসে বাবার বুকটা ঝাঁজরা করে দেয়।'
পরে তাজুলের লাশ তার গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার গুলিবিদ্ধ লাশ দাফন করা হয়। ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তার পরিবারের আহাজারি এখনো থামেনি।
তাজুল স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে ঢাকার পূর্বাচল এলাকার কাঞ্চনব্রিজ সংলগ্ন উলুখোলা এলাকায় থাকতেন। উত্তরা আজমপুর এলাকায় রেন্ট-এ কারের ব্যবসায় জড়িত ছিলেন তিনি। একসময় নিজে গাড়ি চালালেও বয়সের কারণে এখন চালক রেখেছিলেন। আর তিনি রেন্ট-এ কারের অফিসে বসতেন। সংসারের হাল ধরতে ১৫ বছরের সিয়াম টেইলারিংয়ের কাজ শিখছেন।
সিয়াম বলেন, 'ঘটনার দিন ঢাকা শহরে কোটা আন্দোলনে গোলাগুলির খবরে বাবাকে আমরা রাস্তায় বের হতে নিষেধ করেছিলাম। বাবা দুপুরে জানিয়েছিলেন উত্তরার একটি মসজিদের ভেতর আছেন। চালককেও গাড়ি রাস্তায় বের করতে দেননি। বিকেলে সংঘর্ষের সময় রাস্তায় একটু বের হয়ে উঁকি মারতেই গুলিবিদ্ধ হন বাবা। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে বাবার গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পাই।'
সিয়াম বলেন, 'বাবার তো কোনো অপরাধ ছিল না। তিনি কোটা আন্দোলনের কোনো পক্ষেই ছিলেন না। তাকে কেন গুলি করে মারা হলো? এখন আমাদের সংসার কীভাবে চলবে? কার কাছে বিচার চাইব। বাবার মৃত্যুর শোকে মা-ও এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।'
তাজুলের ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালান। ঘটনার দিন নারায়ণগঞ্জে ছিলেন। অন্য চালকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে গিয়ে তার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।
রফিকুল বলেন, 'রাস্তায় কেন নিরপরাধ লোককে গুলিতে মরতে হবে? অন্যদের কাছ থেকে জেনেছি, আমার ভাই বাসায় ফিরতে চেয়েছিলেন, তাই রাস্তার পরিস্থিতি দেখতে বের হন, এ সময় গুলি এসে লাগে তার বুকে।'