‘ব্লক রেইড, গণগ্রেফতার ও রিমান্ডে নির্যাতনের’ ঘটনায় উদ্বেগ সিনিয়র সাংবাদিকদের
সাধারণ ছাত্রদের কোটাসংস্কার আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর 'গণহত্যা, ব্লক রেইড, গণগ্রেফতার, রিমান্ডে অমানুষিক নির্যাতনের' ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের সিনিয়র সাংবাদিকরা।
আজ সোমবার (২৯ জুলাই) এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এ ধরনের 'অমানবিক ও বেআইনি কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে' এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন- ডিইউজে'র সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠান।
বিবৃতিতে সই করা সিনিয়র সংবাদিকরা হলেন – আলমগীর মহিউদ্দিন, আবুল আসাদ, এরশাদ মজুমদার, কবি আল- মুজাহিদী, মোকাররম হোসেন, মোস্তফা কামাল মজুমদার, সালাহউদ্দিন বাবর, রুহুল আমিন গাজী, কবি আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ।
নিচে বিবৃতিটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
'সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব সাধারণ ছাত্র-জনতার ওপর যেভাবে ছাত্রলীগ, যুবলীগকে লেলিয়ে দিয়েছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। উপরের নির্দেশ পেয়ে সরকার দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী এবং পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি যৌথভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে শত শত ছাত্রজনতা নিহত হয়। যার একটি অংশ দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও – ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে দেয়ায় বড় অংশই এখনো অপ্রকাশিত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এপর্যন্ত ২৬৬ জন শহীদের নাম তালিকা প্রকাশ করা হলেও– এ সংখ্যা অনেক বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এপর্যন্ত ৩৬ জনকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। হতাহতের উল্লেখিত সংখ্যা উল্লেখ করে গণমাধ্যমগুলো বলছে এ সংখ্যা মাত্র কয়েকটি হাসপাতাল থেকে পাওয়া। এর বাইরে আরো অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, যেখানে হতাহতের অনেক ঘটনা আছে।'
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, 'অনেকে পরিস্থিতির কারণে লাশ হাসপাতালে না এনে নিজেরাই বাড়িতে নিয়ে দাফন করেন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চিকিৎসাধীন আছেন ৬ হাজার ৭০১ জন (সূত্র প্রথম আলো)। যাদের অনেকেই চিরতরে অন্ধ হয়ে গেছেন, এবং অনেকে হয়েছেন পঙ্গু। এমতাবস্থায় আন্দোলন দমনের জন্য শাসকদের নির্দেশে সাধারণ ছাত্র ও আন্দোলনের সমন্বয়ক, এবং বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে যেভাবে গণগ্রেফতার চালানো হচ্ছে – সেটা রীতিমতো দেশের সংবিধান-বিরোধী ও মানবাধিকারের চরম লংঘন।'
সিনিয়র এই সাংবাদিকরা বলেছেন, 'এটা দিবালোকের মতো সত্য যে, কোটাসংস্কার আন্দোলনে সংঘটিত সহিংসতায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা- কর্মীরাও জড়িত ছিলেন। কিন্তু বেছে বেছে গ্রেফতার করা হচ্ছে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের। আবার যারা ঘটনার সাথে জড়িত নন, তাদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের ব্লক রেইড দিয়ে নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। থানাগুলোতে মামলায় কে কত কত বেশি আসামি দেখাবেন– তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রথমে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে মামলা করে। পরে সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের ধরা হয়, তাদের নাম আসামি হিসাবে দেখানো হচ্ছে।'
তারা বলেন, 'আমরা অবিলম্বে সরকারকে এধরণের অমানবিক ও বেআইনি কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকা এবং হত্যাকান্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার আহবান জানাচ্ছি। সংবিধান নাগরিকদের যে মৌলিক অধিকার দিয়েছে, তা লংঘন না করারও অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, চলমান সমস্যার যৌক্তিক সমাধান নাহলে– দেশের পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। যা আমাদের কারো কাম্য নয়।'
,