অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় বসছেন সেনাপ্রধান
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান, দেশ পরিচালনার জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আলোচনার জন্য আজকেই রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি।
সোমবার (৫ আগস্ট) বিকাল ৪টায় দেশের জনগণের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানান সেনাপ্রধান।
এর আগে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে আলোচনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশে এখন রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। সব হত্যা ও অন্যায়ের বিচার করা হবে।
তিনি জনসাধারণকে ধৈর্য ধরা ও সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
সেনাপ্রধানের সম্পূর্ণ বক্তব্য:
জনগণের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, 'দেশে ক্রান্তিকাল চলছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ করি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সুন্দর ও ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। আলোচনার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে এখন দেশ পরিচালনার জন্য একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। সেই সরকারের মাধ্যমে দেশের সব কার্যক্রম চলবে।'
তিনি বলেন, 'আমরা এখন রাষ্ট্রপতির কাছে যাবো। রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনা করে সরকার গঠন করা হবে।'
সেনাপ্রধান বলেন, 'সমস্ত হত্যা, অন্যায়ের বিচার আমরা করবো। আমি সব কিছুর দায় দায়িত্ব নিচ্ছি। জানমাল ও সম্পদ রক্ষার যত দাবি আছে পূরণ করব। আপনারা সহযোগিতা করেন। ধ্বংস, হত্যা, মারামারি বন্ধ করেন। আমার কথামতো চলেন। আমরা সবাই একসাথে কাজ করবো। দয়া করে সাহায্য করুন। মারামরি করে সংঘাতের মাধ্যমে আর কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়।'
তিনি বলেন, 'প্রতিটি হত্যা, অন্যায়ের বিচার করা হবে। আপনারা সকলে ধৈর্য ধরেন, আমাদের সময় দেন। সকলে মিলে সমাধান করা হবে। দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অর্থনৈতিক ক্ষতি, সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। লোকজন মারা যাচ্ছে। তাই দয়া করে আপনারা ধ্বংসযজ্ঞ, অরাজকতা ও সংঘর্ষ থেকে বিরত হউন। আমি দায়িত্ব নিচ্ছি। সবাই মিলে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হব। সংঘাতের পথে যাবেন না। শান্তিশৃঙ্খলার পথে ফিরে আসেন।'
তিনি আরও বলেন, 'সেনাবাহিনী শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজ চালিয়ে যাবে। সবার দায়িত্ব ছাত্রদের, রাজনৈতিক কর্মীদের দায়িত্ব হচ্ছে সহযোগিতা করা। পরিস্থিতি শান্ত হয়ে গেলে কারফিউ জরুরি অবস্থার কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। আশাকরি আমার বক্তব্যের পরে সুন্দর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আমি সেনাবাহিনীকে আদেশ দিয়ে দিচ্ছি, কোনো গোলাগুলি হবে না। সেনাবাহিনী, পুলিশ কোনো গুলি চালাবে না। আশা করছি, এই বক্তব্যের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে।'
অন্তবর্তীকালীন সরকারের কত সদস্য হবেন এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, 'এখনও খুব আর্লি স্টেজ। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। আলাপ–আলোচনা করে ঠিক করা হবে। আজকেই রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। রাতের মধ্যেই সমাধানে যাওয়ার চেষ্টা করব। ২–১ দিন আমাদের সময় দেওয়া লাগতে পারে।'
সেনা প্রধান জানান, তাদের সঙ্গে আলোচনায় জামায়াতের আমির, বিএনপির উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ, জোনায়েদ সাকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, হেফাজতে ইসলামের মামুনুল হকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের কেউ এসময় উপস্থিত ছিলেন না।
আসিফ নজরুল ওই আলোচনা অনুষ্ঠান থেকে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে একটি ভিডিও বার্তা দেন।