অর্থনীতি সমিতি নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ, কার্যালয়ে তালা
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির দু'পক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি একটি পক্ষ সমিতির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে নিজেদের 'এডহক কমিটি'র সদস্য দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানিয়েছে অপর গ্রুপটি।
'এডহক কমিটি'র দাবি- সমিতির কমিটিতে থাকা সদস্যরা গত ৩ আগস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন জানান। তাই হাসিনা সরকারের পতনের পর এই কমিটির আর দায়িত্বে থাকার অধিকার নেই। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এ কমিটির সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে পালিয়েও ছিলেন বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
আজ শনিবার সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এডহক কমিটি। সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে অপর পক্ষের সদস্যরাও হাজির হন। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডের সৃষ্টি হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে যান। পরে সংবাদ সম্মেলন করে এডহক কমিটি।
উল্লেখ্য, গত মে মাসে নির্বাচনের মাধ্যমে সমিতির কমিটি গঠন করা হয়। এতে কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ও মো. আইনুল ইসলামের প্যানেলের ২৮ জনের মধ্যে ২৭ জন প্রার্থীই জয়লাভ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ও এডহক কমিটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সমিতির কমিটিতে থাকা নেতাদের পদত্যাগ দাবি করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সদস্যরা। আন্দোলনের মুখে কমিটির নেতারা সাতদিনের মধ্যে পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণাও দেন। কিন্তু পরে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য অফিস বন্ধ ঘোষণা করে পালিয়ে যান।
কার্যালয়ে তালা ঝুলানোর বিষয়ে তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে সমিতির কমিটির (অপর পক্ষ) সাত সদস্য নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ক্যাডারসহ প্রায় ১৫ জন সমিতির কার্যালয়ে ঢোকেন। তারা অফিস সহকারী নাহিদ ইসলামকে জিম্মি করে তার মোবাইল ফোনসহ অফিসের সব কক্ষের ও মূল গেইটের চাবি ছিনিয়ে নেন। তারা কার্যালয় থেকে দুটি বস্তায় সমিতির কাগজপত্র ও নগদ অর্থ নিয়ে যান। একইসঙ্গে কার্যালয়ের সব কক্ষ ও গেটে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী অর্থনীতিবিদরা সমিতির নতুন এডহক কমিটি ঘোষণা করা হয় বলে জানান ড. আজিজুর।
তার দাবি- শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতিকে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনে পরিণত করা হয়েছে। সমিতির নেতারা সামিতির পদ ও ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।
ড. আজিজুর বলেন, সমিতির সাবেক সভাপতি ড. আবুল বারকাত দীর্ঘসময় জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ দিয়ে জনতা ব্যাংককে ধ্বংস করেছেন। পরে একই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনিও নতুন করে খেলাপি ঋণ দিয়ে জনতা ব্যাংককে দ্বিতীয় দফায় ধ্বংস করেন।
এডহক কমিটির উদ্দেশ্য সমিতির সব সদস্যদের নিয়ে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা বলে জানান ড. আজিজুর। তিনি বলেন, আমি আশা করছি, এডহক কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করবে।
এদিকে এডহক কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে অপর পক্ষের নেতারা। এডহক কমিটি গঠনের বিরোধিতা করে সমিতির সেক্রেটারি মো. আইনুল ইসলাম বলেন, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পরাজিত প্যানেলের প্রার্থীদের নিয়ে যে এডহক কমিটি গঠনের দাবি করা হয়েছে, তা আইন ও রীতি-নীতির পরিপন্থী।