দিল্লিতে পালানোর আগে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি: জয়
গণঅভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশ থেকে পালাতে বাধ্য হওয়া শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি বলে দাবি করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।
রক্তাক্ত আন্দোলনে ৩০০-র বেশি মানুষ নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হওয়ার পর দেশ ছেড়ে দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছেন হাসিনা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে তার টানা ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটেছে।
ওয়াশিংটনে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, 'আমার মা কখনও অফিশিয়ালি পদত্যাগ করেননি। সেই সময়ই পাননি তিনি।'
জয় আরও বলেন, 'তার পরিকল্পনা ছিল, দেশবাসীর উদ্দেশে একটা বিবৃতি দিয়ে তারপর পদত্যাগ করবেন। কিন্তু আন্দোলকারীরা তখন গণভবনের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে। হাতে একসমই সময় ছিল না। আমার মা ব্যাগ গোছগাছ করার সময়টুকুও পাননি। সংবিধান অনুযায়ী, উনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।'
হাসিনাপুত্র বলেন, প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করলেও সেনাপ্রধান ও বিরোধী রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছেন। এই সরকার গঠনকে 'আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে'।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে বলেও জানান জয়। অবশ্য আগামী তিন মাসের মধ্যে 'অবশ্যই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে' বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'আমি আত্মবিশ্বাসী, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। সেটি না হলেও আমরা বিরোধী দলে থাকব। ফল যেটাই হোক, আমরা সন্তুষ্ট।'
সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও প্রশংসা করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর খালেদা প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসাপরায়ণ হওয়া যাবে না বলে যে আহ্বান জানিয়েছেন, তার প্রশংসা করেন জয়।
তিনি বলেন, 'খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে বলেছেন: যা হওয়ার, হয়ে গেছে, সেসব মনে রাখার প্রয়োজন নেই। তার এই বক্তব্যে আমি খুশি। চলুন আমরা অতীত ভুলে যাই। চলুন আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ না করি। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, সেটি ঐকমত্যের সরকার হোক বা না হোক।'
জয় আরও বলেন, 'বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে' তারা 'বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে চান'।
তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতি ও আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা তর্ক করতে পারি, যেকোনো বিষয়ে দ্বিমত জানাতে পারি। আর আমরা সবসময়ই আপস করার উপায়ও খুঁজে বের করতে পারি।'
তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন করবেন কি না—জানতে চাইলে জয় বলেন, 'এই মেয়াদের শেষে আমার মা এমনিতেই অবসর গ্রহণ করতেন। দল যদি আমাকে চায়, আমি অবশ্যই সেটি বিবেচনায় রাখব।'
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর দাবি জানাচ্ছেন। জয় বলেন, তার মা বিচারের মুখোমুখি হতেও প্রস্তুত।
তিনি বলেন, 'গ্রেপ্তারের হুমকিতে আমার মা কখনও ভয় পাননি। আমার মা কোনো ভুল করেননি। তার সরকারের লোকজন অবৈধ কাজ করেছে—তার মানে তো এই নয় যে, কাজগুলো করতে আমার মা আদেশ দিয়েছেন। তার মানে তো এই নয় যে, ওসবের জন্য আমার মা দায়ী।'
আন্দোলনের সময় মানুষের ওপর গুলি চালাতে আদেশ দিয়েছিলেন কে, তা অবশ্য বলেননি জয়।
তিনি বলেন, 'সরকার একটি বিশাল, বড় যন্ত্র। যারা এসবের জন্য দায়ী, তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। আমার মা মোটেই আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংস হওয়ার আদেশ দেননি। পুলিশ সহিংসতা ঠেকানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছিলেন।'
জয় আরও বলেন, 'দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের আমরা বরখাস্ত করেছিলাম। আমাদের পক্ষে সম্ভব সবকিছুই করেছিলাম আমরা।'
হাসিনাপুত্র বলেন, যখন ইচ্ছে হবে, তখনই দেশে ফিরবেন তিনি। 'আমি তো কোনো বেআইনি কাজ করিনি। তাহলে আমাকে আটকাবে কীভাবে? রাজনৈতিক দলগুলো কোথাও যাচ্ছে না। আপনারা আমাদের মুছে ফেলতে পারবেন না। আমাদের সাহায্য ছাড়া, আমাদের সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব নয়।'