ভারতের বন্ধুত্ব বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাংলাদেশের জনগণ যেন ভারতকে ভালো বন্ধু মনে করে, তা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর রোববার (১১ আগস্ট) নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
"বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার অত্যন্ত ভালো ও গভীর সম্পর্ক বজায় রেখেছে।কিন্তু মানুষের মধ্যে ধারণা আছে যে, বিগত সরকারের সময়ে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। মানুষ যেন মনে করে, ভারত আমাদের ঘনিষ্ট বন্ধু সেদিকে আমরা নজর দেব," বলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক সম্পর্কের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, "কেউ যদি মনে করেন, এই অন্তর্বর্তী সরকার শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট দিকে তাকিয়ে আছে, তাহলে ভুল ভাবছেন। আমরা ভারত, চীন এবং পশ্চিম (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশ) সহ সকলের সাথে মসৃণ ও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।"
মানবাধিকার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, "আন্তর্জাতিক অংশীজনদের কাছ থেকে ইতিবাচক সমর্থন রয়েছে। তাদের উদ্বেগ আমাদের জন্যেও উদ্বেগের বিষয়।"
তিনি আরও বলেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার বিদায় নেবে এবং সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, "আমাদের মূল লক্ষ্য একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। তাই এখনই অনুমান না করি। এই সরকার কবে নির্বাচন দেবে, বিষয়টি দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ আসার পরেই বলা যাবে।"
এ নিয়ে সন্দেহের কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে উপদেষ্টা আরও বলেন, "আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে, স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। সেটি ৭ দিন লাগতে পারে, ১৫ দিন লাগতে পারে, আবার দুই মাসও লাগতে পারে।"
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে প্রায় ৪৫০ জনের মৃত্যুর একটি তালিকা পাওয়া গেছে বলে জানান উপদেষ্টা। এই তালিকা যাচাই ও আপডেট করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এটি আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয় এবং আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের কোনো অনুরোধ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, "কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বিদেশে প্রবাসীদের মিছিল হয়েছে। একটি দেশে বেশ কিছু মানুষকে জেল দেওয়া হয়েছে। গভীরভাবে দেখছি যাতে তারা মুক্তি পায়। চীফ অ্যাডভাইজার সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলবেন, যাতে তারা মুক্ত হয়।"
সংখ্যালঘু ইস্যুতে উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা শীঘ্রই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সব প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসবেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে স্বচ্ছতা ও সততা বজায় থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন তৌহিদ হোসেন। একইসঙ্গে, এক সপ্তাহের মধ্যে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন— সেন্টমার্টিন দ্বীপ একটি দেশকে না দেওয়াতে তার সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে— এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে জবাবে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, "অন্তত পক্ষে আমি আপনাদের বলতে পারি যে আমরা এরকম কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসিনি। আশা করি, ছাত্ররাও এজন্য কোনো আন্দোলন করেনি।"