ডিএমপির আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তারা কাজে ফিরবেন কি?
আওয়ামীপন্থি কিংবা ক্ষমতাচ্যুত সরকারঘেঁষা হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) হারুন অর রশীদ, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, খন্দকার নুরন্নবী অন্তত ৫৭ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকতার হদিস নেই।
এর মধ্যে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার থেকে অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন পুলিশ সদস্যরাও আছেন। ডিএমপি হেডকোয়াটার্সে শুধু ক্রাইম বিভাগের সদস্যরা পুরোদমে অফিস করছেন। ১১ আগস্ট ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্স সংশ্লিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানতে পেরেছে টিবিএস।
তবে ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, থানাগুলোতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দিয়েছেন।
কাজে না ফেরা এসব কর্মকর্তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, 'তারা এখনও কেন কাজে ফেরেনি সেটা আমরা জানতে পারিনি। তাদের ব্যাপারে আমাদের কাছে আপাতত কোনো তথ্যও নেই। আমরা আশাবাদী, তারা দ্রুতই কাজে ফিরবেন।'
তবে এর আগে কাজে না ফেরা পুলিশ সদস্যদের বিষয়ে কড়া মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণনালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. সাখাওয়াত হোসেন। ১১ আগস্ট তিনি বলেন, 'পুলিশের ফোর্স এখনও জয়েন করেনি। তাদের জন্য শেষ তারিখ হচ্ছে বৃহস্পতিবার। আপনারা যদি বৃহস্পতিবারের মধ্যে কেউ না আসেন, আমরা ধরে নেব আপনারা চাকরিতে আসতে ইচ্ছুক নন।'
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, 'এই বৃহস্পতিবারের মধ্যে যে যার জায়গায় চলে যাবেন, ডিউটিতে থাকবেন। যা হয়ে গেছে, অহেতুক কেউ কারও গায়ে হাত তুলবেন না। বিচার করার প্রক্রিয়া আমরা করব। বিচার বিভাগ বিচার করবে। যারা দোষী হবেন—বড় দোষী, ছোট দোষী যে-ই হোক—তাদের পানিশমেন্ট হবে। ঢালাওভাবে কাউকে দোষারোপ করা যাবে না।'
জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'পুলিশের ওপর আক্রমণ করবেন না। আপনারা নিশ্চয় পুলিশের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছেন।'
ওই দিনই (১১ আগস্ট) ডিএমপি সদর দপ্তর দেখা গেছে, সাদা পোশাকে কাজে যোগ দিয়েছেন ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের কর্মকর্তা ও সদস্যরা। তবে তাদের আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত গাড়ি থেকে তুলে ফেলা হয়েছে ডিএমপির লোগো ও পুলিশ লেখা স্টিকার। ভাড়া করা মাইক্রোবাসেও পিক অ্যান্ড ড্রপ দেওয়া হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের।
অতিরিক্ত কমিশনার ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন ও যুগ্ম কমিশনার সঞ্জিত চন্দ্র রায় ছাড়া গত সরকারের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা পুলিশের বেশিরভাগ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজে যোগ দেননি। তারা কোথায় আছেন, তা-ও বলতে পারছেন না সহকর্মীরা। অনেকের ফোনও বন্ধ। একইভাবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশেও বেশিরভাগ কর্মকর্তারা সোমবার (১২ আগস্ট) অফিস করেননি।
সোমবার বিকেল সারে চারটা। ডিএমপির বাড্ডা থানা। কর্মচাঞ্চল্য নেই, বাড়তি মানুষের জটলা নেই। তখনও থানার ভেতরে পোড়া কয়লার গন্ধ। অফিসার ইনচার্জসহ (ওসি) কয়েকজন পুলিশ সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। সেবাগ্রহীতাও নেই। পুলিশের কর্মবিরতি শেষে সবমিলিয়ে নিজেদের আবার গুছিয়ে নিয়মিত কাজে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা দেখা গেলো থানায়। গত রোববারই বসানো হয়েছে নতুন দুটি কম্পিউটার, দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ। বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেওয়ার কার্যক্রম ও টুকটাক অভিযোগ গ্রহণ।
নিজের ব্যাংক হিসেবের কাগজপত্র হারিয়ে সাধারণ ডায়েরি করাতে এসেছেন আব্দুল বাসেত নামের এক তরুন।
তিনি টিবিএসকে বলেন, 'একটা জিডি করলাম। সময় বেশি লেগেছে। তবে থানাগুলোতে কাজ শুরু হয়েছে, এটা স্বস্তির বিষয়।'
থানার ভারপ্তাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস ছালাম মিয়া বলেন, 'মামলা ও অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে। দ্রুতই আমরা শতভাগ কার্যক্রমে ফিরতে চাই।'
বাড্ডা থানার মতোই ডিএমপি ও সারাদেশে মহানগর পুলিশের আওতাধীন থানা, রেঞ্জ ও জেলার আওতাধীন থানাগুলোতেও ফিরেছে পুলিশ।
সারা দেশের মোট ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৬২৮টির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মেট্রোপলিটন এলাকার ১১০টি থানার মধ্যে ১০৮টি এবং জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৫২০টির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বাকি ১১টি থানা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস্, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সব সরঞ্জামাদি ধ্বংস হওয়ায় এসব থানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে এই ১১টি থানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।
তবে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। কিছু থানায় নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যদের পাহারা দিতে দেখা গেছে।
রদবদল
ডিএমপি সূত্র বলছে, ইতিমধ্যেই পাঁচ অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারকে সরিয়ে নতুন পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়েছে।
ডিএমপি সদর দপ্তরের ডিসি হেডকোয়াটার্স, ডিসি মিরপুর, ডিসি ট্রাফিক মিরপুর, ডিসি লজিস্টিকস ও ডিসি গোয়েন্দা গুলশানকে ডিএমপি সদরে সংযুক্ত করে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পদবঞ্চিত পাঁচ অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে এসব উপ-কমিশনার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।