মেট্রোরেল চালু শনিবার: আক্ষেপ মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়ার যাত্রীদের
দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া মেট্রোরেল পরিষেবা আগামী শনিবার (১৭ আগস্ট) থেকে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে থামবে না ট্রেন।
এতে এ দুই এলাকার বাসিন্দারা মেট্রোরেলের দ্রুত ও আরামদায়ক পরিবহনসেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। ফলে এখানকার নিয়মিত যাত্রীদের মনে আক্ষেপ তৈরি হয়েছে।
এসব যাত্রী কর্তৃপক্ষের কাছে এ দুই স্টেশন দ্রুত সংস্কার করে চালুর অনুরোধ জানিয়েছেন। অনেকেই স্টেশনদুটির পার্শ্ববর্তী কোনো স্টেশন থেকে ট্রেন ধরার চিন্তা করছেন।
মিরপুর-১০-এর বাসিন্দা উর্মি কাওরান বাজারে একটি ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করছেন। মেট্রোরেল চালুর আগে রাইড শেয়ারিং বাইক দিয়ে যাতায়াত করতেন। এতে কষ্ট ও সময়ব্যয় দুটোই বেশি হতো।
'মেট্রো চালুর পর এ কষ্ট ছিল না। মিরপুর-১০ স্টেশন থেকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কাওরান বাজার যাতায়াত করতে পারছিলাম। আবার মেয়েদের জন্য আলাদা কামরা থাকাতে খুব সুবিধা হচ্ছিল,' বলেন তিনি।
কিন্তু স্টেশন দুটো বন্ধ থাকায় আবার আগের মতোই যানজট, ধুলো-ময়লা, গরম ঠেলে যাওয়া আসা করতে হবে বলে হতাশা প্রকাশ করেন এ যাত্রী।
মতিঝিলের সিটি সেন্টারে কাজ করেন কাজীপাড়ার বাসিন্দা তোফায়েল আহম্মেদ। তিনি মেট্রোরেলে চড়তে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন।
'মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর মতিঝিলে এখন বাসে বা অন্য কোনো যানবাহনে যাওয়ার কথা চিন্তাই করা যায় না,' বলেন তিনি।
তবে মিরপুর-১০ ও কাজিপাড়া স্টেশন বন্ধ থাকায় এসব এলাকার অনেক বাসিন্দা মিরপুর-১১ বা শেওড়াপাড়া স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে উঠবেন বলে জানিয়েছেন।
মিরপুর-১-এর বাসিন্দা নাজনিন শরিফের অফিস কারওয়ান বাজার। তিনি আগে মিরপুর-১০ স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে উঠতেন।
'এটা বন্ধ থাকায় এখন রিক্সায় মিরপুর-১১-তে গিয়ে উঠতে হবে। এতে দৈনন্দিন যাতায়াত খরচ অনেক বেড়ে যাবে। আবার আগের মতো খুব একটা সময়ও সাশ্রয় হবে না,' বলেন তিনি।
কাজীপাড়া বাসিন্দা ও মেট্রোযাত্রী নাসির বলেন, 'এখন কাজীপাড়া থেকে পায়ে হেঁটে বা রিক্সায় শেওড়াপাড়া গিয়ে মেট্রোতে উঠব। এটা যে কতটা কষ্টের হবে, সেটা শুধু আমরাই বুঝি। তাই কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব স্টেশন দুটো দ্রুত সংস্কার করে চালু করা হোক।'
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দুটি স্টেশন ছাড়া মেট্রোরেলের কোচ, লাইন ও সংকেত ব্যবস্থার কোনো ক্ষতি হয়নি। ফলে স্টেশনদুটি বাদে মেট্রোরেল যেকোনো সময় চালু করা সম্ভব ছিল।
কিন্তু দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় জটিল ও অত্যাধুনিক এ পরিবহন ব্যবস্থার সবকিছু ঠিক আছে কি না, তা দেখার জন্য নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা চালাতে হয়।
'কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। তবে এ চলাচল এক দিন না বেশি হবে, তা নির্ভর করবে কারিগরি দলের ওপর,' বলেন মেট্রোরেলের একজন কর্মকর্তা।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলার শিকার দুই স্টেশনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে একটি গঠিত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরে কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ. এন. ছিদ্দিক বলেন, 'শনিবার (১৭ আগস্ট) আমরা পুনরায় কার্যক্রম চালু করব। তবে কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন দুটি বাদ দিয়ে রেল চলবে।'
তিনি বলেন, ভাঙচুর করা স্টেশনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য গঠিত কমিটি এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সমস্যা নিয়ে এখনো প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। 'প্রতিবেদন পাওয়ার পরে এসব স্টেশন নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।'