স্বৈরাচারের পতন হয়েছে জেনে, মৃত্যুর আগে মুচকি হেসেছিলো গুলিবিদ্ধ স্বজন
"প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার অপারেশন শেষে গুলি বের করা হয় আমার ভাইয়ের পেট থেকে। এরপর কেবিনে দেওয়ার এক ঘণ্টা পরে ভাইয়ের জ্ঞান ফেরে। নার্স বললো, পাঁচ মিনিটের জন্য দেখা করতে পারবেন। আমি ভেতরে ঢুকে কিছু বলার আগেই স্বজন আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, 'শেখ হাসিনা পদত্যাগ করছে?' আমি ধমক দিয়ে বললাম, এখন এগুলা ভাবতে হবেনা। তুই সুস্থ হ আগে।"
"এরপরে আরেকবার যখন দেখা করার সুযোগ আসলো, তখনও আমাকে একই কথা জিজ্ঞাসা করলো। আমি বললাম, 'হ্যাঁ, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালাইছে।' এটা শুনে মুচকি হাসি দিয়ে বললো, 'আলহামদুলিল্লাহ'। এইটাই ছিল আমার ভাইয়ের শেষ হাসি," বৃহস্পতিবার রাতে এভাবেই নিজের ছোটভাইয়ের মৃত্যুর আগ মুহূর্তের বিবরণ দিচ্ছিলেন বড় ভাই অনিক।
একসাথে আন্দোলনে গিয়ে ছোটভাইকে হারানোর বেদনা প্রতিমুহূর্তে তাকে পোড়াচ্ছে। তার দাবি, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিতে মারা গেছেন স্বজন। এর বিচার চেয়ে খুব দ্রুতই আইনের আশ্রয় নেবে তার পরিবার।
গত ৫ আগস্ট দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া ল্যাবএইড হাসপাতালের গলিতে গুলিবিদ্ধ হন আবুল হাসান স্বজন (২৫)। এরপর আহত অবস্থায় ২৭ ঘণ্টা চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৬ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
নিহতের ভাই অনিক বলেন, "আমি আর স্বজন ৫ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে চাষাঢ়ায় ছিলাম। এরমধ্যে একবার পুলিশ এসে টিয়ারশেল, শর্টগানের গুলি ছোঁড়ে। তখন পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।"
"এরমধ্যে ল্যাবএইডের গলি থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের লোকজন পিস্তল, শর্টগান, রাইফেল নিয়ে আমাদের ওপর গুলি চালায়। ছাত্রদের সাথে বার বার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছিল। দুপুর ১টার দিকে আমার ভাই ল্যাবএইডের গলিতে ঢুকলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। সাথে সাথেই মাটিতে পড়ে যায় স্বজন।"
"গুলিবিদ্ধ লাগার পরেও প্রায় ২০০ মিটার হেঁটে আসছিল। পরে যখন দম বন্ধ হয়ে আসে, তখন রিক্সায় তুলে প্রথমে ভিক্টোরিয়া ও পরে ঢাকা মেডিকেলের দিকে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে রওনা হই," বললেন অনিক।
তিনি আরও জানান, ঢাকা মেডিকেলে অসংখ্য রোগীর মাঝে প্রায় ২/৩ ঘণ্টা পর অপারেশন শুরু হয় স্বজনের। তিনবার এক্সরে করে গুলির স্থান শনাক্ত হয়। পাঁচ ঘণ্টা অপারেশন শেষে ডাক্তার জানায় অপারেশন সফল হয়েছে। কেবিনে দেওয়ার ৩ ঘণ্টা পরেই প্রথম জ্ঞান ফিরে স্বজনের।
"কিছুক্ষণ পরেই আবার ও অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপরে আর ওর সেন্স ফেরেনি। ৬ আগস্ট দুপুরে মারা যায় স্বজন," যোগ করেন অনিক।
স্বজনের বাবা জাকির হোসেন বলেন, "ঘটনার দিন দুই ভাই গেল আন্দোলনে। আমার এক ছেলে ফিরেছে, আরেক ছেলে শহিদ হয়েছে। দেশে হাসিনা থাকলে আল্লাহর কাছে বিচার চাইতাম। থানা কোর্টে যেতে পারতাম না। এখন যেহেতু সরকার বদল হয়েছে, আমি চাই যারা আমার ছেলেকে মেরেছে, সরকার যেন তাদের বিচার করে।"