দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোর কার্যক্রম পুনরায় শুরু
১৫ দিনের বিরতির পর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সারাদেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের সবগুলোর কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে।
সরকার নিযুক্ত প্রশাসকরা মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে সিটি কর্পোরেশনগুলোতে তাদের দায়িত্ব শুরু করেন।
দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, তারা মশা নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন এবং সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি মোকাবেলাসহ নাগরিক সেবা বাড়ানোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মো. আতিকুল ইসলামসহ সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদেরকে অপসারণ করে সরকার। যদিও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর বিভিন্ন শহরের মেয়ররা আত্মগোপনে রয়েছেন।
মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য শহরের প্রশাসকরা সাংবাদিকদের সামনে তাদের পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তারা জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে মেয়রের দপ্তর, ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা অফিসে আসেন নি। যেসব কর্মচারী দলীয় ব্যানারে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলেন তারাও অনেকে অফিসে আসছেন না। তবে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস করলেও কাজে গতি কম ছিল। মঙ্গলবার মেয়রের শূন্যতা কাটিয়ে প্রশাসক কার্যক্রম শুরু করায় এখন পুরোদমে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চালু হয়েছে বলে জানান তারা।
যদিও ঢাকা উত্তরের মশক নিধন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে কোনো ব্যাঘাত ঘটতে দেওয়া হয়নি বলে একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। তবে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ বেশকিছু নাগরিক সেবায় ব্যাঘাত ঘটেছিল।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, দক্ষিণ সিটির মধ্যে এতদিন একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজমান ছিল— যা প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে অনেকটাই কেটে গেছে। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী আওয়ামী সরকারের আমলে দলীয় ব্যানার ব্যবহার করে নানান অবৈধ সুবিধা ও নিয়ম বহির্ভূত কাজ করেছেন, তারা কেউ অফিসে আসছেন না। অনেককে আবার অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বিগত দিনে।
এদিকে, সিটি কর্পোরেশনগুলোর কাউন্সিলরদের মাধ্যমে যে সেবাগুলো দেওয়া হয় সে বিষয়গুলোর কী হবে এবং তাদের অবস্থানের বিষয়ে, সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসকরা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মহাপরিচালক) মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসানকে ডিএনসিসির প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "বর্তমান সরকারের কাছে ছাত্র-জনতার যে প্রত্যাশা সেটি পূরণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবো। ডিএনসিসি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবার পরিসর বৃদ্ধি করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।"
কার্যক্রম পরিচালনায় জনগণের সহযোগিতা চেয়ে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, "বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করা হবে। খালের ময়লা পরিষ্কার করে ও অবৈধ দখলমুক্ত করে খালের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনসহ অন্যান্য সকল নৈমিত্তিক সেবাগুলোও অব্যাহত রাখা হবে।"
তিনি বলেন, "সরকারি প্রতিষ্ঠানের সকল আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়মিতভাবেই নীরিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় চলে আসে। তাই যেকোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসির) প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত ডা. মোহ শের আলী বলেন, তিনি প্রথম দিনেই সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং নাগরিক পরিষেবার উন্নতির জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, "প্রথম দিনে সহকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেছি। তাদের কাছ থেকে কর্পোরেশনের বর্তমান কাজে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কিনা, সে বিষয়ে অবহিত হয়েছি এবং সেগুলো বিশেষ করে নাগরিক সেবা আরো সুন্দরভাবে, আরো দক্ষতার সাথে জনগণকে প্রদানের দিকনির্দেশনা দিয়েছি। সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে অব্যাহতভাবে সেসব সেবা প্রদান করতে পারব বলে আমরা আশা করছি।"
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণের পরে নগর ভবনের মেয়রের কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং সিটি ভবন পরিদর্শন করেন।
মতবিনিময় সভায় প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম বলেন, "বর্তমান সরকার একটি দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। সেই আদর্শের জায়গা থেকেই আইন ও নীতি বহির্ভূত যেকোনো কাজ থেকে সিটি কর্পোরেশনকে দূর করতে আমরা কাজ শুরু করেছি।"
তিনি বলেন, "আমাদের মনে রাখতে হবে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়। তাই জনগণ যাতে পূর্ণসেবা পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে মানুষ যেন সেবা না পেয়ে সিটি কর্পোরেশন থেকে ফিরে না যায়।"
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, "আমি দায়িত্ব নিয়ে সব কর্মকর্তাদের সাথে সভা করে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করছি। স্বল্প, মাঝারি, দীর্ঘ পরিকল্পনা বিবেচনায় নিয়ে কীভাবে নগরবাসীকে সেবা দেওয়া যায়, তা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবো।"
এছাড়া, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. জাকির হোসেন মঙ্গলবার রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে সকল শাখা প্রধানদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন।