ভারী বর্ষণে নোয়াখালীতে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি, বন্যার আশঙ্কা বাড়ছে
জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে হওয়া টানা ভারী বর্ষণে বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ২০ লাখ মানুষ আটকা পড়েছে।
খাল ও জলাভূমি দখলের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা সম্ভাব্য বন্যার আশঙ্কা তৈরি করেছে। খালগুলো উদ্ধার ও পানি নিষ্কাশনে সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নোয়াখালী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত মাত্র ১২ ঘণ্টায় ১৭৪ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে, এর ফলে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জেলার সদর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ি, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সুবর্ণচর উপজেলার নিম্নাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব উপজেলার বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এতে লোকজনের মধ্যে বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা, শাক-সবজি। এছাড়া মাঠে পানি বেশি থাকায় অনেক এলাকার কৃষক জমিতে আমন লাগাতে পারছেন না। জলাবদ্ধতায় আটকে আছে ২০ লাখ মানুষ। ডুবে গেছে সড়ক, বাসাবাড়িতেও ঢুকছে পানি। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় দীর্ঘ সময়ের ব্যাপক জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নোয়াখালীবাসীকে। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় দ্রুতই জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান পানিবন্দী মানুষজন।
খালবিল দখল হয়ে যাওয়ার কারণে এমন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। খাল উদ্ধার ও পানি নিষ্কাশনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চান স্থানীয়রা।
সদর উপজেলার আন্ডারচর গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল মাঝি জানান, 'সব রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মানুষের বাসার ভিতরে পানি থৈ থৈ করছে। এতে মানুষ বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেছে। যার কারণে কোনো যাত্রী পাচ্ছি না। বাড়িতেও পরিবারের লোকজন পানিবন্দি রয়েছে। কিভাবে বাঁচবো, কিছুই বুঝতে পারছি না।'
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাহাব উদ্দিন বলেন, 'রাস্তাঘাট ডুবে এখন মানুষের বসতঘরে পানি ঢুকে গেছে। এতো পানি আগে দেখিনি। বৃষ্টি হলে পানি নেমে যায় কিন্তু এবার পানি নামছে না।'
কবিরহাট উপজেলার রুবেল বলেন, 'হাঁটু পানি দিয়ে আমাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করেছে প্রভাবশালীরা। খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও খাল দখল করে বাড়িঘরও নির্মাণ করা হয়েছে। যার কারণে পানি নামছে না। সেনাবাহিনী এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দিয়ে খাল পরিষ্কার করে দিলে জলাবদ্ধতা থাকতো না।'
সুবর্ণচর উপজেলার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক রয়েল চন্দ্র দাস বলেন, 'সুর্বণচরের বেশিরভাগ এলাকার কৃষি জমি তলিয়ে গেছে। প্রশাসন যদি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে কৃষক বাঁচতে পারতো।'
জেলাজুড়ে জলবদ্ধতার কারণে নিম্নআয়ের মানুষ চরম বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বৃষ্টির পানিতে ময়লা মিশে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ।
নোয়াখালীর আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দিনেও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল বলেন, 'নোয়াখালীতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। যা বিগত ২০ বছরেও হয়নি। এছাড়া জোয়ার থাকায় পানি নামতে পারছেনা। আমরা জলাবদ্ধতা রোধ প্রকল্পে শহর ও আশপাশের ১৬১ কিলোমিটার খাল খনন করেছি। এতে করে সব উপজেলায় পানি নিষ্কাশন হওয়ার কথা। তাছাড়া পুরোপুরি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ড্রেন ও নালা রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।'
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, 'সকলের সহযোগিতায় আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অবৈধ বাঁধ কেটে পানি স্বাভাবিক করার কাজ শুরু হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমে গেলে পানি কমে যাবে। এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আশ্রয় দেয়ার জন্য উপজেলা পর্যায়ের সকল মাধ্যমিক, প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান ও মাদরাসা সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বলা হয়েছে। যেখানে যে সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা তা করছি।'