অধিকারের আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিন এলানের সাজার রায় বাতিল
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় মানবাধিকার সংস্থা 'অধিকার'-এর সাবেক সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনকে দেওয়া সাজার রায় বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের দেওয়া এই রায়ের বিরুদ্ধে আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিন এলানের আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি আবদুর রবের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এ রায় দেন।
রায়ের পর আদিলুর রহমান ও নাসির উদ্দিন এলানের আইনজীবী রুহুল আমিন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, 'আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিন এলানের আপিল মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট।'
তিনি জানান, 'নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজার রায় বাতিল করেছেন। ফলে তারা মিথ্যা ওই মামলার দায় থেকে সম্পূর্ণ খালাস পেলেন। এ রায়ের মধ্য দিয়ে সত্যের জয় হয়েছে। মিথ্যা পরাজিত হয়েছে।'
২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ নির্মূলের ঘটনায় অধিকারের তথ্যকে কেন্দ্র করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের (আইসিটি) ৫৭ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছর করে কারাদন্ড দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের এই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিন এলান। তখন তারা কারাগারে ছিলেন।
গত বছরের ১০ অক্টোবর হাইকোর্ট আদিলুর রহমান ও নাসির উদ্দিন এলানের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে জরিমানা স্থগিত করে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। গত বছরের ১৫ অক্টোবর তারা জামিনে কারামুক্তি পান।
অন্যদিকে, এই মামলায় আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিন এলানের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করে।
আদিলুর রহমান খান ও এলানের আপিলের ওপর শুনানি শেষে তা মঞ্জুর করে আজ রায় দেন হাইকোর্ট।
আদালতে আদিলুর রহমান ও নাসির উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রুহুল আমিন ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের বিষয়ে আইনজীবী রুহুল আমিন ভূঁইয়া বলেন, সা'জা বৃদ্ধি চেয়ে আপিলের গ্রহণযোগ্যতার
ওপর শুনানি হয়নি। বুধবার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলটি না চালানোর কথা জানিয়ে তা তুলে নেয়।'
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য-বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। এ মামলায় আদিলুর রহমানকে ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সে সময়ে তিনি ৬১ দিন কারাভোগ করেন। ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট আদালতের অনুমতি নিয়ে অধিকারের কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে দুটি কম্পিউটার ও দুটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। সে বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিন এলান ৬১ জনের মৃত্যুর 'বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা' তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেন। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেন।
মামলায় আইসিটি আইনের ৫৭ (২) ধারায় ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল।
আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিন এলানের কারাদন্ডের ঘটনায় দেশ-বিদেশ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছিল।
সম্প্রতি ২০১৩ সালে হেফাজতের সমাবেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তান্ডবে হত্যার শিকার ৬১ জনের নাম পরিচয় প্রকাশ করেছে অধিকার।
আদিলুর রহমান খান বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।