সারাদেশে বন্যায় ৩ দিনে মৃত অন্তত ১৬; এগার জেলায় প্রায় ৪৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
গত তিনদিনে বেশ কয়েকটি জেলা বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় সারাদেশে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে কুমিল্লায় অন্তত চারজন, চট্টগ্রামে চারজন, কক্সবাজারে তিনজন, ফেনীতে একজন, নোয়াখালীতে একজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন ও লক্ষ্মীপুরে একজন মারা গেছেন।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, গাছ পড়ে এবং পানিতে তলিয়ে গিয়ে মারা গেছেন এসব ব্যক্তি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মৃতদের মধ্যে দুজন নারীও রয়েছেন।
এতে বলা হয়, বন্যাপ্লাবিত ১১ জেলার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ফেনীর। তবে সব জায়গায় ত্রাণ পৌঁছানো হয়েছে। তিন কোটি ৫২ লাখ টাকা দুর্গত জেলাগুলোতে পাঠানো হয়েছে। পর্যাপ্ত শুষ্ক খাবারও পাঠানো হয়েছে।
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় গতকাল (২২ আগস্ট) বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে খালিদ মাহমুদ নামক এক আলিম পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে প্রাণ হারান তিনি।
লাকসামের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল আমিন হোসেন জানান, একই উপজেলায় বন্যার পানির স্রোতে ভেসে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
মৃতদের একজন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট পৌরসভার দাউদপুর এলাকার বাসিন্দা কেরামত আলী (৪৫)। বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে স্থানীয় একটি সেতুর কাছে মাছ ধরতে গেলে তার মৃত্যু হয়।
তিনি ডুবে গেলে স্থানীয়রা তাকে খুঁজতে থাকলে এক পর্যায়ে তার তার লাশ ভেসে ওঠে। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কেরামতকে মৃত ঘোষণা করেন।
নাঙ্গলকোট উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেব দাস দেব বলেন, 'কেরামতকে মধ্যরাতে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। আমরা তাকে মৃত ঘোষণা করার পর তার পরিবার তার লাশ নিয়ে গেছে। আমরা জানতে পেরেছি যে, মাছ ধরতে গিয়ে তিনি পিছলে পানিতে পড়ে গেলে আর উঠতে পারেননি।'
এদিকে বুধবার বৃষ্টির সময় বিদ্যুতের খুঁটি স্পর্শ করে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কুমিল্লা শহরের ছোটরা এলাকায় রাফি (১৫) নামক এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক জোবায়ের হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার মারা যাওয়া আরেকজন হলেন শাহাদাত হোসেন। এ প্রবাসী যিনি বৃষ্টির সময় বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গেলে মাথায় গাছ পড়ে মারা যান।
বুধবার সকালে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সোনাকাটিয়া পূর্বপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শাহাদাত সোনাকাটিয়া গ্রামের কানু মিয়ার ছেলে।
সোমবার কুমিল্লা নগরীর সালাহউদ্দিন মোড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সোহরাব হাসান সোহাগ নামে এক আইনজীবী প্রাণ হারান।
গর্ভবতী স্ত্রীকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেখে রাস্তায় বের হওয়ার সময় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মারা যান সোহাগ।
ফেনী নদীর পানি বিপদসীমার ২ মিটার ওপরে, হালদা ১ মিটার
ফেনীতে ফেনী নদীর পানি বিপদসীমার ২ মিটার এবং চট্টগ্রামের হালদা নদী কয়েকটি পয়েন্টে বিপদসীমার ১ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং নদী তীরবর্তী নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান উপজেলার অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ পানিতে আটকা পড়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
খুলনায় প্লাবিত গ্রাম, মাছের ঘের, ফসলের মাঠ
নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর খুলনার দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় প্রবল জোয়ারে বেশ কিছু গ্রাম, মাছের ঘের ও ফসলের ক্ষেত প্লাবিত হয়েছে।
দাকোপ উপজেলার পানিখালী বাঁধ ভেঙে মাছের খামার ও গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একইভাবে পাইকগাছার দিলুহাটী ইউনিয়নেও ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভেঙে আবাসিক এলাকায় পানি ঢুকেছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে দিলুহাটী ইউনিয়নের কালিনগরের ২২ নম্বর পোল্ডারের দক্ষিণ প্রান্তে ওয়াপদা বেড়িবাঁধ জোয়ারের সময় ভেঙে পড়ে।
৩০০ ফুটেরও বেশি বিস্তৃত এ ভাঙনে কালিনগর, হরিণখোলা ও দারুণমল্লিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সম্প্রতি রোপণ করা ধান ও বীজতলাসহ ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।
কুমিল্লায় প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ভোরে গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে কুমিল্লার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গত মধ্যরাত থেকে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় বাঁধের ছোট গর্ত দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যে গর্তটি দ্রুত বড় হলে বুড়িচং প্লাবিত শুরু করে।
আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত জানা গেছে, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ার শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।
লক্ষ্মীপুরে আটকা পড়েছে প্রায় ছয় লাখ মানুষ
উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অতিবৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে সৃষ্ট বন্যায় প্রায় ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
নজিরবিহীন বন্যায় জেলার চারটি পৌর শহরসহ শত-শত নিচু গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে শহর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অনেক বাড়িঘরে জল ওঠায় রান্নাবান্না ও অন্যান্য দৈনন্দিন কাজকর্ম অসম্ভব হয়ে উঠেছে। গুরুতর পরিস্থিতির কারণে কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
জেলায় শতাধিক মাছের খামার, মুরগির খামার, আমন বীজতলা ও সবজির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।