সরকার পতনের পর ফের আলোচনায় সিলেটের ইলিয়াস আলী, ফিরে পাওয়ার আশায় পরিবার
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক মো. আনসার। নিখোঁজের পর ইলিয়াসের সন্ধান দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন হয় সিলেটে। আন্দোলনে অংশ নিয়ে প্রাণও হারান কয়েকজন। তবে ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যায় আন্দোলনের গতি। এরপর একসময় আলোচনার বাইরে চলে যায় ইলিয়াস নিখোঁজের ইস্যু।
তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সিলেটে আবার আলোচনায় আসে ইলিয়াস আলী। ৫ আগস্টের পর থেকে ইলিয়াসকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে প্রতিদিনই সিলেটে বিভিন্ন কর্মসূচি হচ্ছে। নিখোঁজের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ইলিয়াসের ফিরে আসার অপেক্ষায় তার পরিবার ও দলীয় নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে 'আয়নাঘর' হিসেবে পরিচিত গোপন বন্দিশালা থেকে দীর্ঘদিন পর অনেকে মুক্তি পাওয়ায় তারা আশায় বুক বেঁধেছেন।
গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আয়নাঘর থেকে কয়েকজন মুক্তি পান। তবে ইলিয়াস আলীর এখনো কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিনি বেঁচে আছেন কি না, তাও নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ।
শেখ হাসিনার পতনের পরদিনই সিলেটে এক সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী।
এরপর থেকে প্রতিদিনই মানববন্ধন, সমাবেশ করে ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবি করছে সিলেট বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠন। বিএনপির নেতা-কর্মী ও ইলিয়াস পরিবারের দাবি, ইলিয়াস কথিত বন্দিশালা 'আয়নাঘরেই' থাকতে পারেন। তাকে এখনই মুক্তি দিতে হবে।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, কথিত বন্দিশালা থেকে অনেকেই মুক্ত হচ্ছেন। ইলিয়াস আলীকেও এখন মুক্তি দিতে হবে।
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতা সিদ্দিকী বলেন, 'আমরা এখনও বলছি রাষ্ট্রের কোনো একটি সংস্থা ইলিয়াস আলীকে গুম করে রেখেছে। এই মুহূর্তে তাকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে।'
এদিকে ইলিয়াস আলী বেঁচে আছেন এবং বিদেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন এমন কথাও ছড়িয়েছে সিলেটে।
গত মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার গহরপুর জামেয়া মসজিদে বাদ মাগরিব ইলিয়াস আলীর সুস্থতা কামনায় খতমে বুখারি ও দোয়া মাহফিল করে তার পরিবার। এতে বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, 'আমাদের এখনো দৃঢ় বিশ্বাস তিনি (ইলিয়াস আলী) বেঁচে আছেন। প্রথম থেকেই আমরা এ আশা পোষণ করছি।'
এদিকে সদ্য অবসরে পাঠানো আলোচিত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্বে থাকা এক ডিবি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে বলা হয়, ইলিয়াস আলীর বিষয়ে জিয়ার কাছে সুনির্দিষ্টভাবে প্রশ্ন ছিল, 'ইলিয়াস আলীকে ফেরত পেতে তার স্ত্রী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। এরপর তিনি আপনাকে ফোনে বলেছিলেন, ইলিয়াসকে ছেড়ে দাও। আপনি ওই সময় বলেন, 'ইলিয়াস আলীকে কিছুক্ষণ আগে শেষ করে দেয়া হয়েছে।' এ সময় জিয়া আর কোনো মন্তব্য করেননি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে গাড়িতে করে নিজের বনানীর বাসা থেকে বের হন ইলিয়াস আলী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন গাড়িচালক আনসার আলী। রাত ১২টার পর মহাখালী থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ইলিয়াস আলীর প্রাইভেট কারটি উদ্ধার করে পুলিশ। তখন গাড়িতে ছিলেন না ইলিয়াস ও তার গাড়িচালক।
বনানী থানার তৎকালীন এসআই সাইদুর রহমান সে সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মধ্যরাতে ইলিয়াস আলীর প্রাইভেট কারটি মহাখালী সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। গাড়ির ভেতরে পাওয়া চালক আনসারের মোবাইল ফোন সূত্রে জানা যায় গাড়িটি ইলিয়াস আলীর।
এরপর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা। দীর্ঘ এক যুগেও তাঁর নিখোঁজ হওয়ার রহস্য উদঘাটন হয়নি। নিখোঁজের পর ওই বছরের মে মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সন্তানদের নিয়ে দেখা করনে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনা।