স্রোতে ভেসে বাবার মৃত্যু, ৪ দিন পর উদ্ধার মরদেহ, গাড়ির অভাবে বাড়ি নিতে পারছেন না ছেলেরা
ক্যান্সার আক্রান্ত অসুস্থ বাবার চিকিৎসা করিয়ে চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে যাচ্ছিলেন মওলানা মহিউদ্দিন। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালে চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা দিয়ে দুপুরের দিকে ফেনীর লালপোল এলাকায় বন্যার পানিতে আটকে যায় গাড়ি। মহাসড়কের ওপর তীব্র স্রোতের কারণে হেঁটে যাওয়াও দুষ্কর।
পরে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবকের সহায়তায় একটি ভেলায় করে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে মহাসড়কের জলমগ্ন অংশ পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মহিউদ্দিন।
কিছুদূর যেতেই তীব্র স্রোতের তোড়ে ভেসে যায় ভেলা। সেই ভেলা আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করলে মহিউদ্দিনকেও ভাসিয়ে নিয়ে যায় স্রোত।
অনেক চেষ্টা করেও তীব্র স্রোতের কাছে হার মানেন মহিউদ্দিন। চার দিন পর রোববার (২৫ আগস্ট) সকালে লালপোল এলাকা থেকে ফয়ার সার্ভিসের সহায়তায় ৭২ বছর বয়সি ওবায়দুল হকের মরদেহ উদ্ধার করেন তার দুই ছেলে।
তবে সড়কে তীব্র যানজট ও অ্যাম্বুলেন্স বা কোনো ধরনের যানবাহন না পেয়ে বাবার মরদেহ বাড়িতে নিতে না পেরে মহাসড়কের পাশে বসে কাঁদছিলেন দুই ছেলে। ওই পথে যাওয়া সব গাড়িকে হাতজোড় করে অনুরোধ করছিলেন তাদের বাড়ি পৌছে দিতে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত কেউ তাদের অনুরোধে সাড়া দিচ্ছিল না।
মহিউদ্দিন টিবিএসকে বলেন, 'বন্যার পানিতে ভেলাসহ ভেসে যাওয়া বাবাকে হারিয়ে ফেলার পর সাঁতরে কূলে উঠে অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েও পাইনি। একটা বোট দিয়ে কেউ সহায়তা করেনি। আমি ও আমার ছোট ভাই, দুইজন মিলে চার দিন ধরে অথৈ পানিতে সাঁতার কেটে খোঁজাখুঁজি করে রোববার সকালে বাবার মরদেহ উদ্ধার করি।'
তিনি বলেন, 'ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে একটা ব্যাগে মরদেহ ঢুকিয়ে দিয়ে মহাসড়কের আইল্যান্ডে রেখে চলে গেছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একটা অ্যাম্বুলেন্স, পিকআপ বা সিএনজি কিছুই পাচ্ছি না বাবার লাশটা বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।'
মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আব্দুর রহিম অভিযোগের সুরে বলেন, 'ত্রাণ নিয়ে এত গাড়ি আসছে-যাচ্ছে, কিন্তু কেউ আমাদের সহায়তা করছে না। বাড়িতে সবাই লাশের জন্য অপেক্ষা করছে।'
'সড়কে পুলিশের কোনো দেখা নাই। সেনাবাহিনীও কোনো সহায়তা করছে না। আমরা এখন কোথায় যাব?' বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন রহিম।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে ফেনীতে বন্যার পানিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক তলিয়ে যাওয়ার কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে মহাসড়কে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ গাড়ির লাইন পড়ে যায়।
শনিবার রাত থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করলে ঢাকামুখী লেনে ধীরে ধীরে গাড়ি চলতে শুরু করে। তবে চট্টগ্রামমুখী লেন বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় গাড়ি চলাচল করতে পারছিল না। দুই লেইনের গাড়ি এক লেইনে চলতে থাকায় যানজট আরো তীব্র হতে থাকে।