যশোরে দিনভর বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার হিড়িক
কেউ নিয়ে এসেছেন শটগান, কেউবা পিস্তল। কেউ কেউ রিভলভার নিয়ে এসেছেন থানায়। বেঁধে দেওয়ার সময়ের মধ্যে থানায় লাইসেন্সধারী অস্ত্র জমা না দিলে নেওয়া হবে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা। তাই যশোর কোতয়ালী মডেল থানাতে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দিনভর যার যার অস্ত্র নিয়ে এভাবেই আনাগোনা দেখা গেছে লাইসেন্সধারী অস্ত্র ব্যবহারকারীদের।
যারা সশরীরে আসতে পারেননি, তারা প্রতিনিধি মারফত বিভিন্ন থানায় অস্ত্র জমা দিয়েছেন।
শুধু কোতোয়ালি মডেল থানাই নয়, জেলার আট থানায় দিনভর ছিল অস্ত্র জমা দেওয়ার হিড়িক। তবে জেলায় শটগান, পিস্তল, রিভলভার মিলে এক হাজার ১৩৮ জন লাইসেন্সধারী থাকলেও এদিন রাত ৯টা পর্যন্ত কতজন অস্ত্র জমা দিয়েছেন সেটার সঠিক তথ্য জানাতে পারেনি জেলা প্রশাসন।
তবে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার অস্ত্র লুট হওয়া এবং তারা আত্মগোপনে থাকায় অস্ত্র জমা দেয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আজ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) থেকে যৌথ অভিযান শুরু হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করার ঘোষণা আসার পর মঙ্গলবার রাত ১২ টার মধ্যে এসব অস্ত্র জমা দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা না দিলে এসব অস্ত্রকেও অবৈধ ঘোষণা করা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক নাগরিকদের দেয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। তবে এর আগে দেয়া অস্ত্রের লাইসেন্স বহাল থাকবে, তাদের আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিতে হবে না।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার বলেন, "অস্ত্র জমা দিতে হবে থানায়। আর যারা অথোরাইজড ডিলারের কাছে আগেই আগ্নেয়াস্ত্র জমা রেখেছেন, তারা থানায় শুধু জমার কাগজপত্র জমা দিলেই হবে। অস্ত্র ও গুলি সবই জমা দিতে হবে।"
মঙ্গলবারের মধ্যে যারা অস্ত্র জমা দেবেন না, তাদের আগ্নেয়াস্ত্র অবৈধ বলে বিবেচিত হবে বলে জানান তিনি। কিন্তু মঙ্গলবার জেলায় মোট কতগুলো অস্ত্র জমা দেওয়া হয়েছে সেটার তালিকা করা হয়নি বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
যশোর জেলা প্রশাসকের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাখার তথ্যমতে, যশোরে এক হাজার ১৩৮ জন লাইসেন্সধারী রয়েছেন। বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধি ছিলেন। এছাড়া বিএনপির নেতাকর্মী ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন।
অস্ত্র জমা দেওয়া কয়েকজন ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বৈধভাবেই অস্ত্র ক্রয় করে তারা লাইসেন্সে গ্রহণ করেছেন। এখন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা অস্ত্র জমা দিতে এসেছেন। পরবর্তীতে তারা আবার অস্ত্রের লাইসেন্স গ্রহণ করবেন।
অস্ত্র জমা দিতে আসা আরেকজন বলেন, "আমরা এক বড়ভাইয়ের অস্ত্র জমা দিতে এসেছি। তিনি একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারী ও জনপ্রতিনিধি ছিলেন। এখন তিনি দেশের বাইরে। সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে অস্ত্র জমা দিতে এসেছি।"
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, "কোতয়ালী থানাতে ১৩৫ জন লাইসেন্সধারী রয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজন সামরিক ব্যক্তিও রয়েছেন, আর বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী।"
ইতোমধ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় ৯৪টি অস্ত্র জমা দেওয়া হয়েছে বলে ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন।