কেজিতে ভাড়া ১.৪ টাকা, তবে প্রথম দিনে পণ্য ছাড়াই যশোর থেকে ঢাকা এল ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’
দেশের সবজির ৫০–৬০ শতাংশ চাহিদা যশোর থেকেই মেটানো হয়। এ কারণে কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য সরকার স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস চালু করেছে। তবে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) প্রথম দিনেই ট্রেনটি যশোর থেকে সবজি ছাড়াই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। যশোরের কৃষকেরা জানান, তারা এ বিশেষ ট্রেন সম্পর্কে জানতেন না।
রেল স্টেশন মাস্টার অবশ্য দাবি করেছেন, ব্যাপক প্রচারণা চালানো হলেও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে ভবিষ্যতে ভালো সাড়া পাওয়ার আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাকাল মধ্যবিত্তদের জন্য দেশের ১৫টি উৎপাদক অঞ্চল থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে খুলনা থেকে যশোর হয়ে ঢাকার উদ্দেশে প্রথম 'কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন' ছেড়ে আসে।
ট্রেনটি করে প্রতি কেজি সবজি পরিবহনের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক টাকা ৪০ পয়সা। তবে প্রথমদিন খুলনা থেকে পণ্য পেলেও যশোর থেকে কোনো কৃষিপণ্য বা খাদ্যসামগ্রী ছাড়াই চলেছে এটি।
যশোর সদরের ছোট হৈবতপুর গ্রামের সবজি চাষি আব্দুল আলিমের সঙ্গে আলাপ করতে গেলে তিনি প্রথমবারের মতো এ প্রতিবেদকের কাছেই ট্রেনটিরর কথা শুনছেন বলে জানান।
'কবে থেকে চালু হবে বা হয়েছে, জানিনে। ট্রেন মুন্সি মেহেরুল্লাহ স্টেশনে থামলে আমাদের জন্যে ভালো হয়। এখান থেকে ট্রেনে পণ্য পরিবহন করতে পারলে আমাদের সুবিধা,' বলেন এ কৃষক।
সদরের বারীনগর সাতমাইল হাটের আড়তদার আতিয়ার রহমান বলেন, কৃষকদের জন্য ট্রাকের মাধ্যমে সবজি পরিবহন তুলনামূলক সহজ।
তিনি বলেন, 'কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য আমাদের আড়তে দিয়ে যান। ট্রাক একদম আড়তের সামনে দাঁড়িয়ে পণ্য বোঝাই করতে পারে। এতে আমাদের সুবিধা। স্টেশনে যাওয়া আমাদের জন্যে কষ্টকর, যদিও ট্রেনে মাল পাঠাতে পারলে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হব।'
মুন্সী মেহেরুল্লাহ স্টেশনের পরের স্টেশন ঝিনাইদহের বারবাজারের স্টেশন মাস্টার মোবাশ্বের হোসেন বলেন, 'ট্রেনটি দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে স্টেশন অতিক্রম করে, কিন্তু কোনও সবজি তোলা হয়নি।'
যশোর রেলস্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার এ বিশেষ ট্রেন চলবে। ব্যবসায়ী ও কৃষি বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। প্রথম দিন আশানুরূপ সাড়া না পেলেও তিনি ভবিষ্যতে ইতিবাচক সাড়া আশা করছি আমরা।'
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুশান্ত তরফদার জানান, সবজি পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেন সম্পর্কে তারা অবগত।
'সম্প্রতি সদরের আব্দুলপুর গ্রামের সবজি চাষিদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণে এ বিষয়ে কথা হয়েছিল। তারা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। যেহেতু ট্রেনে পণ্য পাঠাতে খরচ কম, সে কারণে কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন,' বলেন তিনি।
স্পেশাল ট্রেনটির পরিচালক জুলহাস উদ্দিন জানান, 'খুলনা থেকে ৬৪০ কেজি পণ্য নিয়ে ট্রেনটি যশোরে ১০ মিনিটের যাত্রাবিরতি করেছিল, তবে এখানে কোনও পণ্য পাওয়া যায়নি।'
আগামীতে পণ্য আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সাত বগির ট্রেনটি যশোর ছাড়াও মুন্সী মেহেরুল্লাহ, বারবাজার, মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, সফদারপুর, আনসরবাড়িয়া, উথলি, দর্শনা প্রভৃতি স্টেশনে থামবে। রাত ১০টার পরে ঢাকার বিমানবন্দর, তেজগাঁও ও কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছানোর সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে এটির।
মঙ্গলবার খুলনা, বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় এবং শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় কৃষিপণ্য পরিবহনে এ ট্রেন চলাচল করবে।
ট্রেনে প্রতি কেজি সবজি ও কৃষিপণ্য বহনে এক টাকা ৮ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৪৭ পয়সা খরচ পড়বে। এটির মাধ্যমে দৈনিক ১২০ টন পণ্য পরিবহন করা যাবে।