বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকের ঢল
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে টানা ৪৮ ঘন্টা ধরে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। প্রবল বর্ষণে জেলা উপজেলা সদরসহ বিভাগের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। তবে অঝোর ধারার বর্ষণকে আনন্দের উপলক্ষ্য করে নিয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা।
উত্তাল সাগরের আছড়ে পড়া ঢেউয়ে সমুদ্র স্নানে মেতে উঠেছে নানান বয়সী মানুষ। ঢেউয়ের তালে তালে ডুবতে ও ভাসতে দেখা গেছে তাদের। তবে নিরাপদে থেকে ভ্রমণ আনন্দদায়ক করার জন্য সতর্ককতামূলক মাইকিং করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই এমন চিত্র দেখা গেছে সমুদ্র পাড়ে।
কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটক সিফাত উল্লাহ বলেন, 'বন্ধুদের সাথে নিয়ে গোসল করছি সমুদ্রে। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে ঢেউ, বেশ আনন্দ করছি। তবে পুলিশ বার বার মাইকিং করায় এবং পানির স্রোত বেশি থাকার কারণে সৈকতের খুব কাছে থেকেই গোসল করছি।'
আনিসুর রহমান নামে আরেক পর্যটক বলেন, 'কুয়াকাটা ভ্রমণের আকর্ষণীয় সময় প্রকৃতপক্ষে বর্ষা। এইসময়ে সমুদ্রের আসল রূপ দেখা যায়। প্রকৃতিতে ঠান্ডা বাতায় বইতে থাকে। মা, স্ত্রী-সন্তানসহ আমরা পাঁচজনে বেড়াতে এসেছি। বেশ উপভোগ করছি।'
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের পুলিশ সুপার আনসার উদ্দিন বলেন, 'সমুদ্রে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় সমুদ্র উত্তাল। তাই পর্যটকদের নিরাপদে থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। উত্তাল ঢেউ পেয়ে অনেক পর্যটক গোসলে মেতেছেন। এজন্য মাইকিং করছি বারবার। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আমাদের টিম টহলে রয়েছে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশ।'
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল বলেন, 'শনিবার বিকাল ৩টা থেকে রবিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১৫৫ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে গতকাল সকাল ৬টা থেকে আজকে সকাল ৬টা পর্যন্ত রেকর্ড হয় ১৭৭ মিলিমিটার। আজকে সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। ভারী বর্ষণের এই তারতম্য মূলত বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘু চাপটি বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশের ওপর স্থল নিম্নচাপ হিসেবে বিরাজ করছে। এজন্য ভারী বর্ষণ হচ্ছে। রবিবার রাত ১০টা পর্যন্ত আরও ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সোমবার দুপুরের পর আবহাওয়া পরিস্থিতি উন্নত হবে।'
তিনি বলেন, 'সকাল পর্যন্ত নদী বন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকলেও তা বাড়িয়ে ২ নম্বর নৌ হুশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে পায়রা সমুদ্র বন্দরের ৩ নম্বর সংকেত বলবৎ থাকবে।'
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), বরিশালের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, 'বিভাগের নদ-নদীগুলোর পানি উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পায়নি। ১২ টি পয়েন্টের মধ্যে দুটি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এরমধ্যে মেঘনা নদীর ভোলার তজুমদ্দিন পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং পিরোজপুর সদরের বলেশ্বর নদীর পানি ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বর্ষায় উজানের পানি সমুদ্রে গিয়ে পরে। এজন্য দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।'