হত্যামামলায় টেকনাফে গ্রেপ্তার যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানকে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ সোমবার বিকেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী।
তিনি জানান, 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের উপ-পরিদর্শক মো. ময়নাল হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে- ইমাম হাসান ভূঁইয়া তাইমকে গুলি করে হত্যার মামলায় আসামি যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান। তার টেকনাফে অবস্থান করার বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর– আবুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের হেফাজতে আনা হয়েছে। বিষয়টি ঢাকায় সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে। ওখান থেকে পুলিশের একটি দল কক্সবাজারে আসছে। তারা আবুল হাসানকে ঢাকা নিয়ে যাবেন।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে অনেকে নিহত হয়েছেন। তাঁদেরই একজন তাইম, যিনি পুলিশ সদস্যেরই সন্তান। তিনি নারায়ণগঞ্জ সরকারি আদমজী নগর এম. ডব্লিউ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
গত ২০ আগস্ট নিহত তাইমের মা মোসা. পারভীন আক্তার ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেন। মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে পুলিশের এডিসি শাকিল মোহাম্মদ শামীম ও এসি তানজিল আহমেদকে আসামি করা হয়েছে।
একই হত্যামামলায় যাত্রাবাড়ী থানার আরেক পরিদর্শক জাকির হোসেনকেও খুঁজছে পুলিশ। এর আগে সোমবার দুপুরে একই হত্যা মামলায় গ্রেফতার শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক শাহাদাৎ আলীর ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সরকার কারফিউ জারি করে। ওইদিন দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। ওই সময় তাইম তার দুই বন্ধুর সাথে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় চা খেতে যায়। সেসময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করছিল। তখন ডিসি ইকবাল হোসেন, শামীম ও তানজিল আহমেদের নির্দেশে জাকির হোসেন ও তার সঙ্গীরা বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও গুলি চালায়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রাণভয়ে আন্দোলনকারীরা এসময় এলোপাথারি ছুটাছুটি করতে থাকে। তাইম ও তার দুই বন্ধু লিটন চা স্টোরের ভেতর ঢুকে দোকানের সাটার টেনে দেয়। কিন্তু সাটারের নিচের দিকে আধা হাত খোলা ছিল। সেখানে অবস্থানকারীদের পুলিশ টেনে বের করে। জাকির হোসেন গুলির থেকে বাঁচতে চাইলে দৌঁড় দিতে বলে। তখন তাইম সবার আগে দৌঁড় দেয়। জাকির গুলি করে। বিনা চিকিৎসায় তাইম সেখানেই মারা যায়।
তাইমকে হত্যার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমেও। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তাইমকে একদম কাছ থেকে পুলিশ গুলি করছে, তখন তার এক বন্ধু তাকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ওই বন্ধুও উপায় নেই দেখে তাইমকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়াচ্ছে, আর পুলিশ তখনো গুলি করছে।