জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মারধরের শিকার হওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে মারধরের শিকার হওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা সাভারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
নিহত শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
এর আগে গত ১৫ জুলাই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে শামীমকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে তাকে প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে আসলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তার ওপর আবারও হামলা চালায়।
প্রক্টর এ কে এম রশিদুল আলম জানান, প্রক্টর কার্যালয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শামীম শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং পুলিশের কাছে অন্যান্য সহযোগীদের নাম প্রকাশ করে।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করা হলে পুলিশ তাকে সাভার গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে আশুলিয়া থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। চিকিৎসার জন্য পুলিশ তাকে সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিকি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকে বের করার পর শামীমকে হাসপাতালে ভর্তি জন্য নেওয়া হলে আনুমানিক রাত ৯টার দিকে সে মারা যায়।
গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সেলিমুজ্জামান সুজন বলেন, "তাকে রাত সোয়া নয়টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আমরা পরীক্ষা করে জানতে পারি, উনি মারা গেছেন। মূলত উনি আগেই মারা গিয়েছিলেন। কী কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তা ময়নাতদন্ত করে নিশ্চিত হওয়া যাবে।"
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, মারধরের পর শামীমকে প্রক্টর অফিসে সোপর্দ করলে পরে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে পুলিশের গাড়িতে নেওয়ার সময় তিনি স্বাভাবিকভাবে হেঁটে গাড়িতে উঠেন। সেই সময় তাকে দেখে গুরুতর আহত মনে হয়নি। কিন্তু পুলিশের কাছে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু অস্পষ্টতার সৃষ্টি করছে।
গণপিটুনিতে মৃত্যুর বিষয়টিকে 'অস্বাভাবিক' উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, "১৫ জুলাই উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার অভিযোগে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে শিক্ষার্থীরা আটকের পর মারধর করে প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দেয়। আমরা আশুলিয়া থানায় অবহিত করলে পুলিশের একটি টিম আসে।"
প্রক্টর আরও বলেন, "এসময় তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এরপর পুলিশে সোপর্দ করলে তিনি নিজে হেঁটে পুলিশের গাড়িতে ওঠেন। তখন তাকে দেখে আশংকাজনক মনে হয়নি। পরবর্তীতে পুলিশের গাড়িতে মৃত্যুর বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। বিষয়টি ভালোভাবে না জেনে মন্তব্য করতে পারছি না।"
এদিকে, গণপিটুনিতে শামীম আহমেদের মৃত্যুকে বিচারবহির্ভূত হত্যা উল্লেখ করে বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের রাষ্ট্রীয় আইনে শাস্তির দাবি জানান তারা।