অনন্ত গার্মেন্টস, স্পোর্টসওয়্যারের ১২০ শ্রমিক সাময়িক বরখাস্ত
পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষকে কেন্দ্র করে চলমান আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে আশুলিয়ার অন্তত গ্রুপের অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেড এবং অনন্ত স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেডের ১২০ জন শ্রমিককে বরখাস্ত করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
তবে এই শ্রমিকদের অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে- এমন অভিযোগ এনে আজ (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কারখানাটির শতাধিক শ্রমিক।
এ সময় তারা জানান, গতকাল সরকার, শ্রমিক প্রতিনিধি ও মালিকপক্ষের বৈঠক শেষে মালিকপক্ষ সর্বসম্মতিক্রমে শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মেনে নিয়ে আজ থেকে কারখানা খোলার রাখার ঘোষণা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সকালে নির্ধারিত সময়ে কাজে যোগ দিতে আসেন শ্রমিকরা। কিন্তু এ সময় কারখানার মূল ফটকে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান এবং কারখানায় প্রবেশে বাধা দেন।
অনন্ত স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেডের সাময়িক বরখাস্ত শ্রমিক লিটন ইসলাম হৃদয় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সরকার ও মালিকপক্ষ আমাদের দাবি মেনে নেওয়ায় আমরা খুশি মনে সকালে কাজে যোগ দিতে এসেছিলাম। কিন্তু গেইট থেকে আমাদের কারখানায় প্রবেশ করতে দেয়নি। ১২০ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের তালিকা কারখানার গেইটে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।"
"শ্রম উপদেষ্টা বলেছেন, আন্দোলনের কারণে কাউকে চাকুরিচ্যুত করা হবে না, শ্রমিকদের ব্ল্যাকলিস্ট করা হবে না। অন্যকোনো কারখানায়ও কাউকে চাকুরিচ্যুত করা হয়নি, তাহলে আমাদের কেন সাময়িক বরখাস্ত করে নোটিশ দেওয়া হলো?," বলেন তিনি।
প্রীতি নামে আরেক শ্রমিক টিবিএসকে জানান, "আমি কোনো ঝামেলা করিনি কারখানায়, তারপরও আমাকে কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমরা সকাল থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের দাবি যেহেতু মালিকপক্ষ ১৮ দফা দাবি মেনে নিয়েছে, আমরা এতে খুশি, আমাদের পুনর্বহাল করা হোক, আমরা খুশি মনে কাজ করতে চাই।"
এদিকে কারখানাটির মূল ফটকে গিয়ে দেখা যায়, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শ্রমিক অসন্তোষ চলাকালে কারখানার ভেতরে ভাংচুর, লুটপাট, উচ্ছৃঙ্খল, কাজ না করা, স্টাফদের শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করাসহ আইন বহির্ভূত কাজে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ এনে অনন্ত গ্রুপের অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেড এবং অনন্ত স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড এর মোট ১২০ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করে নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে কারখানার গেইটে দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, "গেইটে বরখাস্তকৃত শ্রমিকদের নামের তালিকাসহ নোটিশ আছে, আমরা এ বিষয়ে এরচেয়ে বেশি জানিনা।"
এ সময় কারখানার কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী জানান, "এখানে এই মুহূর্তে কথা বলার মত কেউ নেই, নিচে কেউ আসলে জানাবো।"
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "যেহেতু গতকাল ত্রিপাক্ষিক একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, কোনো শ্রমিককে ছাটাই করা হবে না- সেখানে এভাবে ১২০ জনকে বরখাস্তের অর্থ কি? তাহলে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে লাভ কী হলো? কয়েকদিন আগে দেখেছি পার্ল গার্মেন্টস ৭৫ জন শ্রমিককে ছাটাই করেছে; হাডানায় ৮৫ জন, শিনশিনে ৮১ জন, আজ অনন্তে ১২০ জনকে ছাটাই করা হলো।"
"আমার তো মনে হচ্ছে মালিকরাই এখন শান্তি চাচ্ছেন না। আমাদের দাবি, যত শ্রমিককে ছাটাই করা হয়েছে, অনতিবিলম্বে সবাইকে কাজে পুনর্বহাল করা হোক; অন্যথায় এর জেরে যদি শিল্পে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়, তবে মালিকপক্ষকেই এর দায় নিতে হবে," যোগ করেন তিনি।