নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশ থেকে এলপিজি আমদানির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান ১০ অপারেটরের
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশ থেকে বাংলাদেশের কিছু অপারেটর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলপিজি) আমদানি করছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা প্রত্যাখান করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় অপারেটররা। পাশাপাশি এ ধরনের দাবিকে দেশের এলপিজি শিল্পকে অস্থিতিশীল করার প্রয়াস হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা।
গত সপ্তাহে এলপিজি অপারেটরস অভ বাংলাদেশ-এর ব্যানারে জ্বালানি উপদেষ্টার কাছে এ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ এলপিজি, টিকে গ্রুপের ডেলটা এলপিজি, এনার্জিপ্যাক, ইউনিটেক্স, নাভানা, ওরিয়ন, বিএম এনার্জি, জেএমআই, যমুনা স্পেসটেকসহ ১০টি কোম্পানি।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশ থেকে এলপিজি আমদানি নিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আজম চৌধুরীর চিঠিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে এটি বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে তারা।
ইস্টকোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ও ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশ থেকে এলপিজি আমদানির অভিযোগ তুলে চিঠি দেন।
চিঠিতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপিত রাষ্ট্র ইরান থেকে অবৈধভাবে এলপিজি আমদানি হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। সর্বশেষ বন্দরের চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠিতে 'ক্যাপ্টেন নিকোলাস' ও 'গ্যাস জিএমএস' ট্যাংকার থেকে এলপিজি খালাস বন্ধ করে তদন্তের আহ্বান জানানো হয়।
তবে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এই জাহাজ দুটি থেকে এলপিজি খালাস হচ্ছে বলে টিবিএসকে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে অপারেটরদের পক্ষ থেকে জ্বালানি উপদেষ্টাকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের এলপিজি শিল্পের মালিকদের পক্ষ থেকে আমরা ওমেরা এলপিজির কর্ণধার আজম জে চৌধুরীর আনা বিভিন্ন অভিযোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে তারা। আজম জে চৌধুরীর এসব অভিযোগ এলপিজি শিল্পে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে এবং বাজারে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারের হুমকিস্বরূপ।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের এলপিজি শিল্প কঠোরভাবে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সব বিধিবিধান অনুসরণ করে আমদানি ও পরিচালিত হয়। 'আমরা নিশ্চিত করছি যে আমাদের শিল্পের কোনো প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ রাষ্ট্র, সংস্থা বা জাহাজের সাথে লেনদেনে জড়িত নয়।'
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, এলপিজি আমদানির ক্ষেত্রে তফসিলভুক্ত ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি করা হয়, যা দেশি ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যাপ্ত আমদানি ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাইসহ পণ্য শিপমেন্ট নিশ্চিত করে আর্থিক লেনদেন করা হয়।
চিঠিতে স্বাক্ষর করা ১০টি কোম্পানি নিজেদেরকে দেশের ৮০ শতাংশ এলপিজি সরবরাহকারী দাবি করে আরও বলেছে, গত ৬-৭ বছরে ওমেরা এলপিজির একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাকে জ্বালানি খাতের ক্ষতির প্রয়াস হিসেবে দেখছে তারা। এতে এলপিজির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে বিপর্যয় হলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ, পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ এবং বাজার দর বৃদ্ধিসহ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
আজম জে চৌধুরী সংযুক্ত আরব আমিরাতের মেরানো পেট্রোকেমিক্যালসকে নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন দেশ থেকে এলপিজি আমদানি করছে বলে অভিযোগ করলেও ১০টি কোম্পানি বলেছে, ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডও একই সরবরাহকারীর কাছ থেকে পণ্য আমদানি করেছে। তারা আজমের চিঠিকে ব্যবসায়িক প্রতিহিংসা বলে উল্লেখ করেছে।
যদিও এ জাহাজকে স্যাঙ্কশাং জাহাজ উল্লেখ করে তা থেকে অনেক আগেই এলপিজি আমদানি বন্ধ করার দাবি করেছেন আজম জে চৌধুরী।
তবে আজম জে চৌধুরী বলেছেন, তারা এ সরবরাহকারীর কাছ থেকে আরও আগেই এলপিজি আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমরা যখনই জানতে পেরেছি এ জাহাজটি স্যাংশনভুক্ত (নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত), তখনই তাদের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করেছি।'
চিঠিতে ওমেরার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে অর্থপাচারের অভিযোগও তোলে ১০ অপারেটর।
তারা বলে, দেশের ৮৫ শতাংশ এলপিজি মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা হয়, যার মূল্য প্রতি টনে প্রিমিয়াম ৯০-১০০ মার্কিন ডলার। কিন্তু ওমেরার আমদানিকৃত এলপিজির দর প্রতি টনে প্রিমিয়াম ১১৫-১২৫ ডলার।
ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ওমেরা তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান এমজেএল সিঙ্গাপুরের নামে আমদানি করে অতিরিক্ত অর্থ পাচার করেছে বলে অভিযোগ করেছে ১০ অপারেটর।
এ প্রসঙ্গে আজম জে চৌধুরী বলেন, 'আমরা যে দামেই আমদানি করছি, তা ডিক্লেরাশন দিয়েই আমদানি করছি। ফলে অর্থপাচারের সুযোগ নেই। অন্য কোম্পানি কম দামে আনলে তাদেরও তা ঘোষণা দিয়েই আনা উচিত।'