কার্যালয়ে হামলা সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে প্রশ্ন রেখে গেল: জাতীয় পার্টির নেতারা
রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এ হামলা সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে প্রশ্ন রেখে গেল।
আজ শুক্রবার দুপুরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা দলটির তালাবদ্ধ কার্যালয় পরিদর্শনে আসেন। এ সময় কার্যালয়ের বাইরে তাদের ভিড় দেখা যায়।
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় 'ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা'র ব্যানারে এক দল বিক্ষোভকারী দলটির বিজয়নগরের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। একপর্যায়ে দলটির কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়।
ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে বাগেরহাট জেলার জাতীয় পার্টির নেতা সজন কুমার মিস্ত্রি বলছিলেন, এরশাদের আমলে এভাবে ঘোষণা দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়নি। এই ঘটনা তো আমাদের হাসিনা আমলের প্রতিচ্ছবি স্মরণ করিয়ে দেয়। এ হামলা সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে প্রশ্ন রেখে গেল। সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে ভঙ্গুর সেটা এ ঘটনায় তা স্পষ্ট। একইসাথে দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনিক স্থিরতা দেখাতে না পারায় সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। আর সেটাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে আমাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে। এ অবস্থা থেকে বের হতে না পারলে দেশ প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বের হতে পারবে না।
আগামীকাল মহাসমাবেশের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে এ ঘটনার জবাব দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাট থেকে আসা আরেক নেতা শফি গণি স্বপন বলেন, আমরা নির্বাচনমুখী দল। গত ১৫ বছরে হাসিনার দুঃশাসনে তো কেউ দাঁড়াতে পারেনি, তাহলে শুধু শুধু আমাদের ওপর দায় কেন? এখন হাসিনা পালানোর পর সবাই বাহাদুর সাজছে।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এরশাদের আমলে সবাই নিরাপত্তা পেয়েছিল। এই দলটির সম্ভাবনা স্পষ্ট, সেটার কারণেই এই প্রজন্মের পোলাপান না জেনেই এখানে হামলা করেছে। এই বাংলাদেশে জাতীয় পার্টির অবদান অন্য সব দল থেকে বেশি।
তিনি আরও বলেন, এরশাদের আমলে প্রশাসন বিন্যস্ত হয়েছে, প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ২৫ বছরের যুবকরা সেটার কি বুঝবে? আমাদের সময়ে কোনো আয়নাঘর, হাওয়া ভবন তৈরি হয়নি। যারা এখানে হামলা করেছে, তারা নব্য দালাল। আমরা আগামীকাল সমাবেশ করেই জাতিকে দেখাবো জাতীয় পার্টির সক্ষমতা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের দেয়ালে ছাত্র-জনতার লেখা বাক্যগুলো মুছে দিচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। একইসাথে নিচতলায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি কক্ষ পরিষ্কার করছেন তারা।
দলটির কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত রমনা মডেল থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্য জানান, তারা আজ সকাল থেকেই এখানে ডিউটিতে আছেন। তখন থেকে নতুন করে কোনো কিছুই হয়নি। তবে সারাক্ষণ মানুষ আসছেন, দেখছেন, তারপর চলেও যাচ্ছেন। বেশি জমায়েত হতে দেওয়া হচ্ছে না।
এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, 'আমরা শনিবার যে কর্মসূচি দিয়েছি, সে কর্মসূচি চালু থাকবে। কেউ ভয় পাবেন না যে যেখানে আছেন।...আমরা মরতে আসছি, আমরা মরতে চাই। কত লোক মারবেন ওনারা, আমরা সেটা দেখতে চাই।'
জি এম কাদের বলেন, 'জাতীয় পার্টি জাতীয় পর্যায়ের একটি রাজনৈতিক দল। বারবার আমাদের কবরস্থ করার পরও আমরা কবর থেকে উঠে এসেছি। কেউ আমাদের ধ্বংস করতে পারেনি। যেহেতু আমরা সহাবস্থানের রাজনীতি করি, আমরা দখলদারি করিনি, সন্ত্রাসের রাজনীতি করি না, হাট-মাঠ-ঘাট দখল করিনি, মানুষকে অত্যাচার-দলীয়করণ করিনি। আমরা মানুষকে সুশাসন দিয়েছি, উন্নয়ন দিয়েছি, সংস্কার দিয়েছি, গণতান্ত্রিক অধিকার দিয়েছি। মানুষ তা স্মরণ করে।'