অস্কারজয়ী ও চেক নিউ ওয়েভ চলচ্চিত্রকার ই্যরি মেঞ্জেলের চির বিদায়
৮২ বয়সে মারা গেলেন অস্কারজয়ী চেক চলচ্চিত্রকার ই্যরি মেঞ্জেল।
১৯৬৬ সালে তার 'ক্লোজলি ওয়াচড ট্রেনস' চলচ্চিত্রটি 'বিদেশি ভাষার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র' ক্যাটাগরিতে অস্কার জয় করে। এই প্রভাববিস্তারী ও অনুপ্রেরণাদায়ী চলচ্চিত্রকারের মৃত্যুসংবাদ তার স্ত্রী অলগা মেঞ্জেলোভা নিজের ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন।
'ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কুকু'স নেস্ট' নির্মাতা মিলোস ফরমান এবং 'ডেইজিস' নির্মাতা ভেরা খ্যিতিলোভাসহ এক ঝাঁক দাপুটে ও প্রভাববিস্তারী চলচ্চিত্রকারের সৃষ্টিকর্মে ১৯৬০-এর দশকে গড়ে ওঠা বিখ্যাত চলচ্চিত্র আন্দোলন 'চেকোস্লাভ নিউ ওয়েভ'-এর অন্যতম প্রধান প্রতিনিধি ছিলেন মেঞ্জেল।
জীবনের শেষ বছরগুলোতে তিনি নানাবিধ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৭ সালে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর তিনি সাধারণত জনসমক্ষে আসতেন না।
'প্রিয়তম ই্যর্কা [ই্যরির আদুরে ডাকনাম], তোমার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি দিনের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ জানাই। প্রতিটি দিনই ছিল অসাধারণ। গত তিনটি বছর আমাদের খুবই কঠিন গেছে, এই দিনগুলোর জন্যও তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ', ওই মৃত্যুসংবাদবাহী পোস্টে লিখেছেন তার স্ত্রী।
মেঞ্জেলোভা জানিয়েছেন, মেঞ্জেল নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শনিবার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান দখলকৃত চেকোস্লোভাকিয়ায় ট্রেন স্টেশনে দায়িত্ব পালনকারী এক শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি সচেতন যুবককে ঘিরে তৈরি 'ক্লোজলি ওয়াচড ট্রেন'-এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র মণ্ডলে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে মেঞ্জেলের।
বিংশ শতকের অন্যতম সেরা চেক সাহিত্যিক বহুমিল হ্রাবালের উপন্যাস অবলম্বনে এ চলচ্চিত্র। একই সাহিত্যিকের অন্য সাহিত্যকর্ম নিয়ে আরও চলচ্চিত্র বানিয়েছেন মেঞ্জেল। এরমধ্যে রয়েছে ২০০৬ সালের 'আই সার্ভড দ্য কিং অব ইংল্যান্ড'।
অস্কারজয়ী চলচ্চিত্রটির স্মৃতিচারণ করে, ২০১৬ সালে মেঞ্জেল বলেছিলেন, 'এই চলচ্চিত্রের জন্য যত পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছি, আমার কাছে তারচেয়েও অনেক মূল্যবান হলো হ্রাবালের সঙ্গে একজীবনের বন্ধুত্ব।'
নিজ প্রজন্মের আরও অনেক চলচ্চিত্রকারের মতো মেঞ্জেলকেও কমিউনিস্ট শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।
রাজনৈতিক নিপীড়নের মাধ্যমে লোকজনকে একটি স্ক্র্যাপইয়ার্ডে কাজ করতে বাধ্য করার কাহিনি নিয়ে ১৯৬৯ সালে নির্মিত চলচ্চিত্র 'লার্কস অন অ্যা স্ট্রিং' তার দেশে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল।
চলচ্চিত্রটি ১৯৯০ সালে জার্মানির বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয় এবং দুনিয়াখ্যাত ওই চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার- 'গোল্ডেন বিয়ার' জয় করে।
চলচ্চিত্রে হাস্যরস ও স্মৃতিকাতরতার মিশ্রণে জীবনের এক তিক্ত-মধুর রূপ ফুটিয়ে তোলায় পারদর্শী ছিলেন মেঞ্জেল। তার চলচ্চিত্রকে চেক দর্শকরা মমতার সঙ্গে মান্য করেন।
মেঞ্জেলের ১৯৮৫ সালের চলচ্চিত্র 'মাই সুইট লিটল ভিলেজ'ও অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিল এবং এটিকে চেক চলচ্চিত্র দর্শক ও চলচ্চিত্রকাররা তার একটি ক্লাসিক্যাল সৃষ্টিকর্ম হিসেবে গণ্য করেন।
নির্মাণের পাশাপাশি বেশ কিছু চলচ্চিত্র ও মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন মেঞ্জেল। জীবনের বেশিরভাগ দিনগুলো অবিবাহিত হিসেবে কাটিয়ে, ২০০৪ সালে তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজক মেঞ্জেলোভার সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন।
'আমাদের জন্য তিনি যা করে রেখে গেছেন, সবকিছুর জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। বিদায়, স্যার!'- মেঞ্জেলের প্রয়াণে টুইটবার্তায় লিখেছেন ২০০০ সালে 'ডিভাইডেড উই ফল' চলচ্চিত্রের জন্য অস্কার মনোনয়ন পাওয়া চেক চলচ্চিত্রকার ইয়ান হ্রেবেইক।
- সূত্র: রয়টার্স