২০২৩ সালের বর্ষসেরার তালিকায় আসা সিনেমা
২০২৩ সালটা সিনেমার ক্ষেত্রে মিশ্র স্বাদের।
'বার্বেনহাইমার'-এর খাপছাড়া মিশ্রণ; মিশন: ইম্পসিবল — ডেড রেকনিং পার্ট ১, জন উইক: চ্যাপ্টার ৪-এর মতো ধুন্ধুমার অ্যাকশন সিনেমার বহুল প্রত্যাশিত সিক্যুয়েল; ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য ডায়াল অভ ডেস্টিনি, টপ গান: মাভেরিক, দ্য ইকুয়ালাইজার ৩-এর মতো কাল্ট ক্লাসিকের প্রত্যাবর্তন; কিলারস অভ দ্য ফ্লাওয়ার মুন, দ্য কিলার, নেপোলিয়ন, অ্যাস্টেরয়েড সিটি'র মতো প্রথিতযশা পরিচালকদের কাজ; মেগ ২, এক্সট্রাকশন ২-এর মতো গতানুগতিক সিক্যুয়েল; অপারেশন ফরচুন, এক্সপেন্ডেবলস ৪, ফ্রিলান্স-এর মতো হালকা মেজাজের, ক্ষেত্রবিশেষে ব্যর্থ অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার; ৬৫, গাই রিচি'স দ্য কোভেন্যান্ট, ডানজেন অ্যান্ড ড্রাগনস: অনার এমং থিভস-এর মতো পুরোদস্তুর ভিন্ন স্বাদ — ২০২৩ সালে দর্শক প্রায় সব ঘরানার সিনেমা চেখে দেখতে পেরেছিলেন।
বছরশেষে সেরা সিনেমার তালিকা প্রকাশ করেছে অনেক গণমাধ্যম, সমালোচকেরাও তাদের বর্ষসেরা সিনেমার নাম জানিয়েছেন। এসব তালিকায় যে সিনেমাগুলোর নাম বারবার এসেছে তার কয়েকটির কথা এখানে উল্লেখ করা হলো।
অ্যাস্টেরয়েড সিটি
ওয়েস অ্যান্ডারসনের এ সিনেমাটিকে দ্য আটলান্টিক পরিচালকের 'গত এক দশকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ' বলে অভিহিত করেছে। কমেডি-ড্রামা ঘরানার এ সিনেমার গল্পে দেখা যাবে ১৯৫০-এর দশকের রেট্রো-ফিউচারিস্টিক সংস্করণ। অভিনয় করেছেন জেসন শোয়ার্টজম্যান, স্কারলেট জোহানসন, টম হ্যাঙ্কস টিল্ডা সুইনটন, ব্রায়ান ক্র্যান্সটনের মতো শিল্পীরা। দ্য আটলান্টিক, ও দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর বর্ষসেরা সিনেমার তালিকায় স্থান পেয়েছে সিনেমাটি।
দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন
গত ২০ বছর ধরেই নিয়মিত অবসর নেওয়ার কথা বলে ভক্তদেরকে আতঙ্কের মধ্যে রাখছেন কিংবদন্তিতুল্য পরিচালক হায়াও মিয়জাকি। দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন এক দশক বিরতির পর তার নতুন সিনেমা। আবারও চিরাচরিত সেই ম্যাজিক্যাল অ্যাডভেঞ্চার। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত জাপানি উপন্যাস হাউ ডু ইউ লিভ?-কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সিনেমার গল্প।
১২ বছর বয়সি মাহিতো সদ্য মা-হারা, নিজেকে সে খুঁজে পায় কথা বলা পাখি ও অদ্ভুত স্বপ্নের এক দুনিয়ায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার পটভূমিতে তৈরি সিনেমাটি জাপানি ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই তৈরি করা হয়েছে। ইংরেজি সংস্করণে কণ্ঠ দিয়েছেন ডেভ বাতিস্তা, ফ্লোরেন্স পু, মার্ক হামিল, ক্রিস্টিয়ান বেল, রবার্ট প্যাটিনসের মতো তারকারা।
স্টুডিও গিবলি'র অ্যানিমেটেড এ সিনেমাটি দ্য আটলান্টিক, ও এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি'র বর্ষসেরা সিনেমার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
পাস্ট লাইভস
নোরা ও হা সুং ছোটবেলার দুই বন্ধু। একসময় নোরার পরিবার দক্ষিণ কোরিয়া ছেড়ে উত্তর আমেরিকায় চলে যায়, আলাদা হয়ে পড়ে দুই বন্ধু। দুই দশক পর এক সপ্তাহের জন্য দুজনের মধ্যে আবার দেখা হয় — তৈরি হয় ভালোবাসা, নিয়তি, আর সিদ্ধান্তের দ্বন্দ্ব।
হলিউডের সুপারহিরো ও ব্লকবাস্টার সিনেমার ভিড়ে রম-কমের জায়গাই যেন নেই। সেজন্য এ বছর পাস্ট লাইভস অনেক সিনেমাপ্রেমীর জন্যই ভিন্ন ঘরানার বহুল আকাঙক্ষিত চলচ্চিত্র।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টুডিও এ২৪-এর ব্যানারে সেলিন সং পরিচালিত পাস্ট লাইভস ভ্যারাইটি, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, ও এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি'র বর্ষসেরা সিনেমা হিসেবে স্থান পেয়েছে।
কিলারস অভ দ্য ফ্লাওয়ার মুন
১৯২০-এর দশকে ওকলাহোমায় আদিবাসী ওসেজ জাতিদের ভূমিতে তেল আবিষ্কৃত হয়। এরপর গোষ্ঠীটির একের পর এক সদস্য খুন হতে থাকেন। ওসেজ নারী মলি বার্কহার্ট চেষ্টা করেন তার গোষ্ঠীর সদস্যদের খুনের হাত থেকে বাঁচাতে। এক পর্যায়ে রহস্য উন্মোচন করতে নামে এফবিআই।
মার্টিন স্করসেজির প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার এ সিনেমা সম্প্রতিই মুক্তি পেয়েছে। ওসেজ গোষ্ঠীর সদস্য মলি বার্কহার্টের চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিলি গ্ল্যাডস্টোন। আর তার স্বামী আর্নেস্ট হিসেবে দেখা গেছে লিওনার্ডো ডিক্যাপ্রিওকে। আরও অভিনয় করেছেন শক্তিমান অভিনেতা রবার্ট ডি নিরো। লোভ, খুন, প্রতিযোগিতা, শক্তির খেলা — তথাকথিত 'আমেরিকান ড্রিম'-এর নোংরা, অসুস্থ রূপ দেখা যাবে এ সিনেমায়।
দ্য আটলান্টিক, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, ও এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি বর্ষসেরা সিনেমাগুলোর শীর্ষে রয়েছে কিলারস অভ দ্য ফ্লাওয়ার মুন।
ওপেনহাইমার
ক্রিস্টোফার নোলানের ওপেনহাইমার তৈরির সময় থেকেই জল্পনাকল্পনার শীর্ষে ছিল। এ বছরের সেরা সিনেমার নামের তালিকায় ওপেনহাইমার প্রায়ই চূড়ার দিকে থাকছে। নোলানের 'ম্যাগনাম ওপাস' হিসেবে এটিকে অভিহিত করেছে এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি।
তারকাখচিত সিনেমাগুলোর তালিকায়ও ওপেনহাইমার-এর নাম প্রথম দিকেই থাকবে। কিলিয়ান মার্ফি, এমিলি ব্লান্ট, ফ্লোরেন্স পু, রবার্ট ডাউনি জুনিয়র, কেনেথ ব্রানা, ম্যাট ডেমন, কেসি অ্যাফ্লেক; হলিউডের বাঘা বাঘা সব অভিনেতাদের একজোট করেছেন নোলান।
পদার্থবিজ্ঞানী জে. রবার্ট ওপেনহাইমার, তার ম্যানহাটন প্রজেক্ট পরিচালনা ও পরিশেষে পারমাণবিক বোমা তৈরি দেখা যাবে ওপেনহাইমার সিনেমায়। বক্স অফিসেও সফল এ সিনেমাটি — আরেকবার নোলান মনে করিয়ে দিলেন, সিরিয়াস সিনেমাগুলোও ব্যবসাসফল হতে পারে।
প্রায় তিন ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের এ সিনেমাটিকে এ বছরের সেরা সিনেমার তালিকায় প্রথম দিকে রেখেছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য আটলান্টিক, ভ্যারাইটি, ও এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি।