স্ট্রে কিডস: যেভাবে ২০২৩ সালের চার্টে কে-পপ
গত বছর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গানের আর্টিস্ট হিসেবে তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন মার্কিন গায়িকা টেলর সুইফট। তার পরই দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত ব্যান্ড সেভেনটিন ও স্ট্রে কিডস। এছাড়া সাত নম্বরে টুমরো এক্স টুগেদার ও আট রয়েছে কিশোরীদের পপ দল নিউজিন্স। এ দুটিও দক্ষিণ কোরিয়ার। খবর বিবিসির।
তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে র্যাপার ও সঙ্গীতলেখক ড্রেক ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে গায়ক ও সঙ্গীতলেখক দ্য উইকেন্ড। দুজনই কানাডার।
কোনো ব্যান্ডই ইউকে টপ ৪০ ভাঙতে না পারলেও, সাইয়ের গ্যাংনাম স্টাইল আন্তর্জাতিক সঙ্গীত অঙ্গনে সাড়া ফেলার পর থেকে ১২ বছরে বিশ্বজুড়ে কে-পপের খ্যাতি বাড়ছেই। তাদের গানগুলো মার্কিন সঙ্গীত অঙ্গনেও জায়গা করে নিয়েছে।
সঙ্গীতের বৈশ্বিক এই তালিকায় দক্ষিণ কোরিয়ার জায়গা করে নেওয়ার শুরুটা জনপ্রিয় ব্যান্ড বিটিএসের হাত ধরে। দলটি 'বাটার' ও 'ডিনামাইট'র মতো সাড়া জাগানো পপ গানগুলো ইংরেজিতে রেকর্ড করার আগেই উচ্চ-ধারণার সঙ্গীতের জন্য এ তালিকায় জায়গা করে নেয়।
২০১৯ সালে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে প্রথম কে-পপ ব্যান্ড হিসেবে শিরোনাম হয় বিটিএস। এর দুই বছরের মধ্যে তারা গ্র্যামিতে পারফর্ম করে ও রক ব্যান্ড কোল্ডপ্লের সঙ্গেও কাজ শুরু করে।
কে-পপের প্রথম নারী দল ব্ল্যাকপিংকও সমান খ্যাতি অর্জন করেছে। গত বছর তারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় কোচেলা উৎসব ও লন্ডনের বিএসটি হাইড পার্কে পারফর্ম করে দর্শকদের মাতিয়ে তোলে।
তবে ব্যাপক জনপ্রিয়তার পরও দু'টি ব্যান্ডের কোনোটিই গত বছর বিক্রি হওয়া সেরা গানগুলোর তালিকায় নেই। বিটিএস সদস্যদের মনযোগ আপাতত দক্ষিণ কোরিয়ার বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবা সম্পন্ন করার দিকে। অন্যদিকে ওয়াইজি ইন্টারটেইনমেন্টের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে পুনরায় আলোচনায় ব্যস্ত সময় পার করছে ব্ল্যাকপিঙ্ক।
কে-পপের এই সাফল্যের পেছনের কারিগর হলো ওয়াইজি এবং বিগ হিটের মতো বিনোদন প্রতিষ্ঠানগুলো। কোনো কনসার্ট বা অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার আগে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ ও অডিশনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিল্পীদের তৈরি করে থাকে।
শিল্পীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ২০২২ সালে এসএম ইন্টারটেইনমেন্টের প্রধান ক্রিস লি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছিলেন, 'যদি আপনি অলিম্পিক দলে থাকেন, আপনাকে প্রশিক্ষিত হতে হবে। আমরা এর সঙ্গে (আমাদের) কোনো পার্থক্য দেখি না।'
তিনি জানান, তাদের (শিল্পী) মিডিয়ার সামনে কথা বলা শেখানো হয়। দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে কথা বলতে শেখানো হয়। পাশাপাশি তাদের ভালো ব্যক্তিত্ব অর্জন করাও শেখানো হয়।
স্ট্রে কিডসের বাজিমাত
বিটিএস বা ব্ল্যাকপিঙ্ককে ছাড়িয়ে এবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলেছে স্ট্রে কিডস। রহস্যময় গান উপহার দিয়ে ছুঁয়েছে লাখো শ্রোতা-দর্শকের মন।
দলটিতে রয়েছেন ফেলিক্স, চ্যাংবিন, লি নো, হান, সিউংমিন, আই.এন, ব্যাং চ্যান ও হিউনজিন। তাদের গানগুলো সাধারণত গতানুগতিক ধারার বাইরের। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গানের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থেকে ২০২৩ সাল শেষ করেছে গ্রুপটি।
গত বছর দলটির সেভেনটিনথ্ হ্যাভেন মুক্তি পায়। মুক্তির আগেই ৫.২ মিলিয়ন গ্রাহক অ্যালবামটির জন্য অর্ডার করে। মুক্তির আগে সবচেয়ে বেশি অর্ডার হওয়া কে-পপের এটিই প্রথম অ্যালবাম।
বর্তমান স্ট্রিমিং যুগেও বিপুল সংখ্যক সিডি বিক্রি করছে ব্যান্ডগুলো। এর একটি কারণ হতে পারে ডিস্কের কাভারে দারুন আর চমকপ্রদ সব পোস্টার, স্টিকার বা লিরিক কার্ডের ব্যবহার। কিছু কিছু কভার দলের নির্দিষ্ট সদস্যকে উৎসর্গ করা হয়। আর সেই কপি সংগ্রহের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন সেই সদস্যের অন্ধভক্তরা।
তবে এর অর্থ এই নয় যে তাদের সাফল্য সম্পূর্ণরূপে বিক্রির ওপরই নির্ভর করছে। গত বছরের শেষে রক ব্যান্ড রোলিং স্টোন, ম্যাগাজিন এনএমই ও বিলবোর্ড ম্যাগাজিনসহ অন্যদের করা একাধিক তালিকায় 'বর্ষসেরা' হয়েছে নিউজিন্সের গান সুপারশাই।
বিটিএস ও ব্ল্যাকপিঙ্ক উভয়ই এ বছর আবারও নতুন করে তাদের সঙ্গীত অঙ্গনে ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে। কে বলতে পারে কে-পপের বিশ্বব্যাপী আধিপত্য হয়ত এখান থেকে নতুন মাত্রা পাবে।
২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া শীর্ষ ২০ আর্টিস্ট
১. টেলর সুইফট (যুক্তরাষ্ট্র)
২. সেভেনটিন (দক্ষিণ কোরিয়া)
৩. স্ট্রে কিডস (দক্ষিণ কোরিয়া)
৪. ড্রেক (কানাডা)
৫. দ্য উইকেন্ড (কানাডা)
৬. মর্গ্যান ওয়ালেন (যুক্তরাষ্ট্র)
৭. টুমরো এক্স টুগেদার (দক্ষিণ কোরিয়া)
৮. নিউজিন্স (দক্ষিণ কোরিয়া)
৯. ব্যাড বানি (যুক্তরাষ্ট্র/পুয়ের্তো রিকো)
১০. লানা ডেল রে (যুক্তরাষ্ট্র)
১১. এড শির্যান (যুক্তরাজ্য)
১২. আইভিই (দক্ষিণ কোরিয়া)
১৩. এসজেডএ (যুক্তরাষ্ট্র)
১৪. এমিনেম (যুক্তরাষ্ট্র)
১৫. এনসিটি ড্রিম (দক্ষিণ কোরিয়া)
১৬. জ্যাক ব্রায়ান (যুক্তরাষ্ট্র)
১৭. ট্রাভিস স্কট (যুক্তরাষ্ট্র)
১৮. কানিয়ে ওয়েস্ট (যুক্তরাষ্ট্র)
১৯. পোস্ট ম্যালোনে (যুক্তরাষ্ট্র)
২০. কিং অ্যান্ড প্রিন্স (জাপান)।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক