কল্যাণমুখী বাজেটের স্বপ্ন
২০১৯-২০২০ অর্থবছরের শেষ প্রান্তে আমরা। এমন সময় বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে করোনাভাইরাস নামক প্রাণঘাতী মহামারি। ভয়ংকর স্থবির হয়ে পড়েছে সারা পৃথিবীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। তবে আশার কথা, বাংলাদেশে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। তার ফলে অর্থনীতিতে গতি ফিরবে ক্রমান্বয়ে- এই আশা করা যায়।
এই বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেই সামনের মাসে ২০২০-২০২১ সালের বাজেট ঘোষিত হতে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে আসন্ন বাজেট কতটা ফলপ্রসূ হবে, কতটা কল্যাণময় হবে, সেটাই দেখার বিষয়। গতানুগতিক বাজেট হলে সেই বাজেট এই সংকটকালীন অবস্থায় দেশের উপকারে আসবে না। তাই বাজেট প্রণয়নে আমাদের গতানুগতিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং এই বাজেট হতে হবে প্রথমত, করোনা মহামারির ফলে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের এবং দ্বিতীয়ত করোনা পূর্ববর্তী প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা ও কল্যাণ সম্প্রসারণকেন্দ্রিক।
অর্থনীতির সাম্প্রতিক গতি-প্রকৃতি
বাংলাদেশের অর্থনীতি যে গতিতে সামনে যাচ্ছিল, তা অনেকের কাছেই ছিল অনুকরণীয়। এটি সমগ্র পৃথিবীর কাছে একটি উন্নয়ন বিস্ময়। কিন্তু করোনা মহামারি আমাদের অর্থনীতির চাকাকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ এ বছর বড়জোর ২-৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। কেউ কেউ বলছে, প্রবৃদ্ধি একেবারে নাও হতে পারে।
বর্তমানে ক্ষতির গভীরতা অনেক বেশি হলেও প্রকৃত তথ্য কেউ এখন দিতে পারবেন না; কারণ কেউ জানেন না এই সমস্যা কতদিন থাকবে। তবে বেকারত্ব বাড়ছে ও বাড়বে, দারিদ্র বাড়বে, ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হবে, মানুষের আয় কমবে, সামগ্রিক ব্যয় কমবে, রপ্তানি আয় কমবে, আমদানি ব্যয় কমবে এবং সার্বিকভাবে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমবে, তাতে কারও সন্দেহ নেই।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আগেই কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাসের শ্লথগতি, আমদানি-রপ্তানি হ্রাস ও রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রায় ঘাটতির কিছু চিহ্ন ছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসেই সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা মোট বাৎসরিক লক্ষমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।
এবারের বাজেট হতে হবে কল্যাণমুখী
কোভিড-১৯ আমাদের অর্থনীতির ক্ষিপ্র গতিকে একেবারে স্থবির করে দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশকালে ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকার জিডিপি ও ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল। অর্থবছরের সাত-আট মাস পরে কোভিড-১৯-এর আঘাতে অর্থনীতির যে সঙ্কোচন শুরু হয়েছে, তাতে এবার জিডিপির সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি ৫ থেকে ৫.৫ শতাংশ হতে পারে, যদি ঈদের পরে আমাদের আবারও লম্বা লকডাউনে যেতে না হয়। যতদূর জানি, আগামী বছরের জন্য ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭৪৪.৯ কোটি টাকার খসড়া বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে।
চলমান ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ দিকে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও বিপণন, সেবা খাত এবং সেই সঙ্গে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়- সবদিকেই করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থায় ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে করোনাভাইরাসের প্রভাবজনিত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
আমরা জানি, সরকারের রাজস্ব আয় এবার অনেক কমে যাবে; কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে থাকায় ভ্যাট, আমদানি শুল্ক, সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি প্রভৃতি থেকে আয় টার্গেটের অনেক নিচে থাকবে। অন্যদিকে সরকারের বিভিন্ন রকম সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ব্যয় বাড়বে, করোনা পরিস্থিতিতে দরিদ্র মানুষকে খাদ্য সহায়তা ও নগদ সহায়তার ব্যয়, নানা রকম অর্থনৈতিক প্রণোদনার জন্য ব্যয় হবে। এ বছর আমাদের জন্য নতুন অঙ্গীকারের বছর, নতুন চিন্তার বছর, নতুনভাবে সমাজকে ঢেলে সাজানোর বছর।
বঙ্গবন্ধুর আকাঙ্ক্ষা ছিল সমাজের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানো। মনে হয়, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব মাননীয় প্রাধানমন্ত্রীর সামনে আরেকটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে সাধারণ মানুষকে নিয়ে ভাবার, তাদের জন্য কল্যাণকর কিছু করার।
নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে নিম্নলিখিত পরামর্শ রাখতে চাই:
১। স্বাস্থ্যখাতের একটা ভঙ্গুর চেহারা দেশবাসীর সামনে উন্মোচিত হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়নি। জনবল, অবকাঠামো ও প্রশিক্ষণ ঘাটতি প্রকট। যৌক্তিক কারণেই স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ১ লাখ ৪৮৮.৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এটা জিডিপি এবং বাজেটের যথাক্রমে ৩.৩৯ এবং ১৩.০৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে ছিল যথাক্রমে ০.৮৮ এবং ৪.৯ শতাংশ। সামনের প্রতিটি বাজেটে স্বাস্থ্যখাতকে প্রাধান্য দিতে হবে। জরুরি স্বাস্থ্য সামগ্রী ক্রয়সহ একটা জরুরি ফান্ড রাখতে হবে, যেন কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন তৈরি হলে অল্প পয়সায় বা বিনামূল্যে মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। তাছাড়া স্বাস্থ্যবীমাকে সার্বজনীন করার কথা চিন্তা করতে হবে।
২। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষাকে প্রযুক্তি ও গবেষণা নির্ভর করতে হবে। এবার শিক্ষা, প্রযুক্তি ও গবেষণায় ১ লাখ ২৫ হাজার ৯৮১.৩ কোটি টাকার বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এটা জিডিপির ৪.২৫ শতাংশ এবং বাজেটের ১৬.৪০ শতাংশ, যা চলতি বছরে ছিল জিডিপি ও বাজেটের যথাক্রমে ২.৭৫ ও ১৫.২ শতাংশ। শিক্ষাখাতে কারিগরী শিক্ষা, হাতে কলমে শিক্ষা ও পেশাদারদের দিয়ে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সবার জন্য শিক্ষা; তবে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা হতে হবে যোগ্যদের জন্য সীমাবদ্ধ। শিক্ষিত শ্রমিক বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করতে হবে, যেন রেমিটেন্স আয় কয়েকগুণ বাড়ানো যায়।
৩। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। আয়-সহায়তা, বেকারত্ব ভাতা, শিশু প্রতিপালন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, অবসর ভাতা, আবাসন সহায়তা, স্বাস্থ্য ভাতা নিশ্চিত করতে হবে। এ বাবদ এ প্রস্তাবে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯২৩.৯ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এটা প্রাক্কলিত জিডিপি ও বাজেটের যথাক্রমে ৫.৫৩ এবং ২১.৩৫ শতাংশ। গত অর্থবছরে পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১.০১ এবং ৫.৬ শতাংশ মাত্র। এই বরাদ্দ জিডিপির ৬ থেকে ৬.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। একটি স্বচ্ছ ডাটাবেজ তৈরি করে এই কর্মসূচীর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া খাদ্য সহায়তা ছাড়াও নগদ সহায়তার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৪। করোনার কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। সে ক্ষেত্রে দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। সরকারের রেশনিংয়ের আওতা বাড়িয়ে দুই লাখ করার চিন্তা করা যায় কি না, সেটা ভাবতে হবে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৬৩.৯৯ কোটি টাকা। এটা জিডিপির ১.৫ এবং বাজেটের ৫.৭৯ শতাংশ। এই বরাদ্দ জিডিপির ২.০০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।
৫। বর্তমান বাজেটে অতিক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য ১৫০০ কোটি টাকার একটা তহবিল রাখার প্রস্তাব করছি, যেখান থেকে বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ নেওয়া সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে সরকারি সোনালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকসহ পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প ইত্যাদির সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।এই ছোট শিল্পগুলো আর্থিক সহায়তা পেলে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং তারা ক্রমান্বয়ে মাঝারি ও বড় শিল্পোদ্যোগে যেতে পারবে।
৬। শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবাসমূহে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২১ হাজার ৬৩৯.১৪ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা জিডিপির ০.৭৩ এবং বাজেটের ২.৮১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ০.১২ শতাংশ এবং বাজেটের ০.৭ শতাংশ। শিল্পোদ্যোগকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। তাছাড়া দেশের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পকে অতীব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। রপ্তানি শিল্পে বহুমুখীকরণ অত্যাবশ্যকীয়। শুধু তৈরি পোশাকশিল্প নির্ভরতা আমাদের বিপদে ফেলতে পারে। শিল্পবৈচিত্র্যকরণ, সবুজায়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতি উজ্জীবন সমন্বিত শিল্পায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি। বড় শিল্পের খেলাপি প্রবণতা কমানোর জন্য সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বড়শিল্পের ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে ঋণসীমা কমানোর চিন্তা করতে হবে। তাছাড়া শিল্পের মাধ্যমে যেন টাকা পাচার না হয়, সেজন্য সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে; সরকারি ইনসেন্টিভ সৎ ও সতর্কভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৭। সরকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এমন প্রকল্পের বাস্তবায়নে প্রাধান্য দিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং, বিদেশ ভ্রমণ, সেমিনার আয়োজন ইত্যাদিতে বরাদ্দ কম রাখতে হবে। সরকারের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প অব্যাহত রাখতে হবে, যেন সেখানে মানুষের কর্মসংস্থান হয়। গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ অন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলো রাখতে হবে। তবে সর্বক্ষেত্রে কর্মীরা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
৮. এবারের বাজেটে কৃষিশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পপণ্যের সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট দিতে পরিবহন খাতে ব্যয় বাড়ানোর দরকার হবে। করোনাভাইরাসের কারণে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখাটাই একটা চ্যালেঞ্জ। পণ্য উৎপাদন বাড়লেও লাভ নেই, যদি পণ্য মানুষের কাছে ঠিকমতো পৌঁছানো না যায়।
৯। তেলের দাম এ বছর কম। সেজন্য কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টগুলোর উৎপাদন ব্যয় এ বছর কম থাকবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী এক বছরের জন্য বিদ্যুতের লাইফলাইন ভোক্তাদের বিদ্যুৎ বিল কম রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলে মানুষ উপকৃত হবে।
১০। করের আওতা বাড়ানো জরুরি। কর মুক্ত আয়ের সীমানা ৪ লাখ করা যেতে পারে। করপোরেট ট্যাক্স কমাতে হবে। তবে কর আদায়ের ব্যাপারে কঠিন হতে হবে। কালো টাকা হয় উড়াল দেয় নতুবা ঘরে লুকিয়ে থাকে! কালো টাকা কালো কাজে ব্যবহারও হওয়ার সুযোগ থাকে।
১১। মানুষ বাসায় বসে কাজ করতে অভ্যস্ত হচ্ছে। অনেক কাজ এখন থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে হবে। পড়াশোনা, অফিসের বিভিন্ন মিটিং করা, অনলাইনের কেনাকাটা এসব বিবেচনায় ইন্টারনেটের ওপর থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো দরকার। কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট এবং এ সংক্রান্ত পণ্যের ওপর ট্যাক্স কমাতে হবে।
১২। স্বাস্থ্যহানী ঘটায়- যেমন তামাক, সিগারেট ইত্যাদি পণ্যের ওপর বেশি কর বসানো দরকার। বিলাসদ্রব্যের ওপর শুল্কহার, সারচার্জ বাড়াতে হবে।
১৩। এ বছর সরকারের রাজস্ব আয় কম হবে। সেজন্য ব্যয়ের ব্যাপারেও সরকারকে সতর্ক হতে হবে। সরকারের বিশাল কর্মযজ্ঞ চালাতে যে খরচ, সেখানে অপচয় ও অপব্যয় জনিত খরচ কমাতে হবে। অকারণে বিদেশ ভ্রমণ, বেশি গাড়ি ব্যবহার ও সরকারি সম্পদ খরচ থেকে বিরত থাকতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ইনহাউস ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাদের দক্ষতার উন্নয়ন জরুরি। সরকারি কাজের গতি বাড়াতে হবে, প্রতিটি কাজ একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করে দেশের সামগ্রিক কাজে গতি আনতে হবে। ভালো কাজে পুরস্কার ও মন্দ কাজে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
১৪। বাজেটে আয় বৈষম্য কমানোর জন্য উচ্চসম্পদশালীদের ওপর সম্পদ কর আরোপের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিঃশর্তে কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে উচ্চ কর দিয়ে নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রাখতে হবে। এদেশে যে বিপুল সংখ্যক বিদেশি নাগরিক কাজ করছে, তার ডাটাবেজ তৈরি করে তাদের বৈধভাবে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাতে সরকার বিপুল অঙ্কের কর আয় করতে পারবে। দেশি ব্যাংকের ওপর ঋণের বোঝা কমানোর জন্য বিকল্প পন্থা হাতে নিতে হবে। স্বল্প সুদে বিদেশি ঋণ নেওয়া যেতে পারে।
১৫। দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করে চীন থেকে যেসব দেশের বিনিয়োগ বেরিয়ে যাবে, সেসব বিনিয়োগকে আমাদের দেশে আনার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বিদেশে আমাদের শ্রমিকেরা যেন ফিরতে পারেন, সেজন্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মোটকথা ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে সব ক্ষেত্রে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাজেট ঘাটতি এবার অনেক বেশি হবে, এটাই বাস্তবতা। তবে আয় যেহেতু কমার আশঙ্কা রয়েছে, ব্যয়েও আমাদের খুব সতর্ক হতে হবে। আয় ও ব্যয়- এই দুইয়ের ভারসাম্য রেখে বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও জীবনের নিরাপত্তা দিতে জনকল্যাণকর মানবিক বাজেট আমরা চাই এই বছরের জন্য।
করোনাভাইরাস আমাদের জন্য যেমন সংকট নিয়ে এসেছে, তেমনি আমাদের শিখিয়েছে মানবিক হতে। আমরা যেন মানবিক হই, মানুষের সাহায্যে হাত বাড়াই, মানুষ যেন হই মানুষের জন্য।
আশা করি, আমরা একটা কল্যাণকর ও মানবিক বাজেট পাব।
- লেখক: কলাম লেখক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
ফাউন্ডার ও সিইও, ফিনপাওয়ার লিডারশিপ ইন্টারন্যাশনাল