মেডিকেল বর্জ্য শোধন না করলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে
চিকিৎসা কার্যক্রম জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয় কিন্তু এর ফলে নানা বর্জ্য তৈরি হয়। এগুলোকে মেডিকেল বর্জ্য বা ক্লিনিক্যাল বর্জ্য বলা হয়। এসব বর্জ্য পরিবহন এবং ব্যবস্থপনার কাজটি এমনভাবে করতে হবে যেন সংক্রমণ না ঘটে এবং পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে। এটি অব্যবস্থপনার ফলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
মেডিকেল বর্জ্যকে প্রাথমিক ভাবে দুভাগে ভাগ করা হয়ঃ ১. সাধারণ বর্জ্য ২.সংক্রামক বর্জ্য। মেডিকেলে উৎপাদিত মোট বর্জ্যের সাধারণ বর্জ্য প্রায় ৭৫-৮০℅ থাকে আর সংক্রামক বর্জ্য থাকে প্রায় ২৫-২০℅। যদি এসব সংক্রামক বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থপনা না করা হয় অর্থাৎ সাধারণ আর সংক্রামক বর্জের আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা বা শোধন না করা গেলে আমরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ব। তাই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মেডিকেল বর্জ্য।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের গবেষণা বলছে প্রতিদিন ৩৭০০ মেট্রিক টন বর্জ্যের মধ্যে ২০০ টন হাসপাতালের বর্জ্য যার ৪০ টনই সংক্রমক বর্জ্য। (সুত্রঃ দ্য ডেইলি অবজারভার, ২০০০)।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাত সহায়তা কর্মসুচি (HSP) কর্তৃক প্রকাশিত মার্চ, ২০১৭ প্রতিবেদনে বলা হয় ২০০৯-২০১৫ সালের যে সকল স্থাপনা HSP এর আওতায় পড়েনা তাদের গড়ে প্রায় নয় হাজার টন বিপজ্জনক মেডিকেল বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। এটি থেকে সহজেই অনুমেয় মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
করোনা সংকটে অনেক জায়গায় অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টার চালু হয়েছে ফলে আমাদের মেডিকেল বর্জ্যের পরিমাণও বেড়ে চলছে, ফলে এটি ব্যবস্থাপনার বিশেষ প্রয়াস চলাতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মেডিকেল বর্জ্যগুলোকে নিম্নোক্ত ধরনের ভাগ করেছেন।
সংক্রামক: যথেষ্ট পরিমাণ প্যাথোজেন যুক্ত যা সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। যেমন: রক্ত,পুজ ইত্যাদি।
ধারালো বস্তু: ডিসপোজেবল সুই, সিরিঞ্জ, করাত,সার্জিক্যাল ব্লেড,ভাঙ্গা কাচ , পেরেক ইত্যাদি।
ঔষধ: মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ।
অন্যান্য ডিসপোজাল বর্জ্য: ক্যাথেটার, অক্সিজেন মাস্ক, পিপিই, এনজি টিউব মাস্ক, গাউন গগলস, স্যু কভার, ফেস শিল্ড ইত্যাদি।
অন্যান্য: (সাধারণ বর্জ্য) খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্যাকেট ইত্যাদি।
মেডিকেল বর্জ্য ( ব্যবস্থপনা ও শোধন) নীতি ২০০৮ অনুযায়ী মেডিকেল বর্জ্যগুলোকে আলাদাভাবে ব্যবস্থপনার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বর্জ্য ব্যবস্থপনার জন্য ৬টি রংয়ের আলাদা পাত্র রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এসব মেডিকেল বর্জ্য পৃথকীকরণ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে হাসপাতালে কর্মরত সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থপনার জন্য নিম্নোক্ত কাজ গুলো করা যেতে পারে-
পৃথকীকরণ: কালার কোড অনুযায়ী ময়লা উৎপাদনস্থলে আলাদা করতে হবে। পরিবহন বর্জ্য খোলা অবস্থায় পরিবহন করা যাবে না এবং হাসপাতালের নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশনে জমা করতে হবে।
ব্যবস্থাপনাঃ বর্জ্যের শ্রেণীভেদ অনুযায়ী এগুলো ব্যবস্থপনা করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় কিছু মুনাফালোভী অসাধু চক্রডিসপোজাল আইটেম যেমন, সিরিঞ্জ, স্যালাইন সেট,গাউন এগুলো ডাম্পিং স্টেশন থেকে চুরি করে আবার বাজারে ছেড়ে দেয় এটি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। সাধারণ বর্জ্যগুলো শুধুমাত্র সঠিকভাবে প্যাকেজিং করে আলাদাভাবে ডাম্পিং করতে হবে।
হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না করা গেলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এবং আমরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ব। এজন্য স্ব স্ব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র আইসোলেশন সেন্টার গুলোর বর্জ্য ব্যবস্থপনা চালু করা দরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে চলা অপরিহার্য। আসুন মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করি। সংক্রমণ কমাই।
লেখকঃ নার্সিং কর্মকর্তা, ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল কক্সবাজার। সাবেক শিক্ষক, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল নার্সিং কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট।