সাপ্তাহিক ছুটি বাড়িয়েও অর্থনীতি চাঙ্গা করা সম্ভব?
বিশ্ব অর্থনীতি কোভিড-১৯ মহামারির ক্ষত থেকে পুনরুদ্ধার হতে শুরু করেছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদানের দাবিদার, গণ টিকাদান কর্মসূচি ও বড় ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ।
বাইরে গিয়ে কেনাকাটা করতে কিংবা ছুটির দিনগুলোতে ভ্রমণে যেতে বেশিরভাগ মানুষই এখন নিরাপদবোধ করছেন। এ কারণে বাড়ছে ভোক্তাদের ব্যয়। এর পরবর্তী চ্যালেঞ্জটি হলো, বিঘ্নহীনভাবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করা।
অনেক দেশের সরকার অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করতে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনী নীতি গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন সরকারি ছুটি প্রবর্তনের কথা বলা যেতে পারে। যার উদ্দেশ্য, ভোক্তার ব্যয়কে আরও উদ্দীপিত করা।
উদাহরণস্বরূপ, থাইল্যান্ড সরকার ২০২০ সালের ক্যালেন্ডারে চারটি নতুন সরকারি ছুটি যুক্ত করেছে। দীর্ঘ সপ্তাহান্ত তৈরির মাধ্যমে যেন দেশের অর্থনীতিকে, বিশেষ করে পর্যটন খাতকে চাঙ্গা করা যায় সেজন্যই এ উদ্যোগ।
ব্যয় উদ্দীপিত করতে চীনের তিনটি প্রদেশে আড়াই দিনের সপ্তাহ শেষের ছুটি ঘোষণার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে নিউজিল্যান্ডেও।
ভারত আগামী বছরের শুরুতে নতুন শ্রম নীতি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে, যেখানে চার কর্মদিবসে শেষ হবে সপ্তাহ। তবে, প্রতি কর্মদিবসে কাজ করতে হবে ১২ ঘণ্টা করে।
এ ধরনের 'শর্ট উইক' ও 'লং উইকেন্ড' কৌশল অনেক দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই কৌশল অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোক্তাদের ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। কারণ মহামারির সময়ে জারি করা আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাগুলো এখনও পর্যন্ত আগের মতো শিথিল করা হয়নি অনেক দেশেই।
যেমনটি আমরা জানি, বাংলাদেশে দুই ঈদের ছুটিতে, পূজা ও পহেলা বৈশাখের সময় খুচরা বিক্রেতা ব্যাপকভাবে ব্যবসা করেন। তাই খুচরা বিক্রেতা ও হোটেল ব্যবসায়ীরা মূলত এই উত্সবগুলোর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন সারাবছর।
অন্যদিকে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎসব উদযাপনের ধরণও পরিবর্তিত হয়েছে। মানুষ এখন উৎসবের ছুটিতে নিজেদের গ্রামের বাড়ি ও পর্যটন কেন্দ্র উভয় জায়গায়ই ভ্রমণ করেন। ফলে এই সময়ে, বিশেষ করে যখন উত্সবের ছুটির সঙ্গে নিয়মিত সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হয়, তখন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়, যা এখন নিয়মিতই শিরোনাম হয়ে উঠছে দৈনিক সংবাদপত্রের পাতায়।
বিজয় দিবসের সাম্প্রতিক দীর্ঘ সপ্তাহান্তে কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ভিড় আমরা দেখেছি।
এই উৎসবগুলোতে বাংলাদেশের মানুষ পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের জন্য উপহার কিনতে অর্থ ব্যয় করে থাকেন। এটি ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবর্তিত ভোগের ধরণকে নির্দেশ করে, যার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ আয় করা সম্ভব।
ভোক্তা শ্রেণীর আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ছুটির চাহিদাও বাড়ছে। আর এই ক্রমবর্ধমান ভোক্তা শ্রেণী ও ছুটি উপলক্ষ্যে তাদের আর্থিক ব্যয়কে ব্যবহার করা যেতে পারে আঞ্চলিক ও জাতীয় অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করতে। ধারণাটি হল, 'স্থানীয়' অর্থনৈতিক বাজারে আমাদের ভোক্তাদের আয় খরচ করার সুযোগ করে দিতে হবে।
সাম্প্রতিক ছুটিগুলোতে ভোক্তাদের ব্যয়ের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, নিজেদের সুবিধামতো ছুটি পেলে ভোক্তারা ইতোমধ্যে যা ব্যয় করেছেন, এরচেয়েও আরও বেশি ব্যয় করতে পারেন। সে সামর্থ্য তাদের আছে।
অর্থাৎ, আরও বেশি ছুটি বা দীর্ঘ সপ্তাহান্ত পাওয়া গেলে মানুষ আরও বেশি ব্যয় করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০২১ সালে ১৮টি সরকারি ছুটি ছিল, যার মধ্যে সাতটি ছুটি নিয়মিত সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে মিলে যায়।
সাপ্তাহিক ছুটি দীর্ঘ করতে এই ছুটিগুলো সহজেই বৃহস্পতিবার বা রোববারে স্থানান্তরিত করা যেতে পারে। এছাড়া, সপ্তাহের মাঝামাঝি পড়ে এমন কিছু ছুটির দিন রোববার বা বৃহস্পতিবার পালন করা যেতে পারে; তবে, অবশ্যই সেটি করতে হবে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবসগুলো বাদ দিয়ে।
মোট ছুটির সংখ্যা বৃদ্ধি না করে এবং কর্মঘণ্টা না হারিয়েও, ছুটির দিনের রদবদলের মাধ্যমে অর্থনীতিতে একটি বড় প্রভাব নিয়ে আসা যেতে পারে। আর এটি নিঃসন্দেহে অনেক কম খরচের।
মহামারির ধাক্কা থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের এই মুহূর্তে, কৌশলটি পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে।