মোদিকে নিয়ে বিবিসির ডকুমেন্টারি: টুইটার, ইউটিউব লিংক ব্লকের নির্দেশ ভারতের
২০০২ সালে গুজরাটে হওয়া দাঙ্গায় ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি 'ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন' নামের একটি তথ্যচিত্র বা ডকুমেন্টারি সম্প্রচার করেছে বিবিসি। মোদিকে নিয়ে বিবিসির বিতর্কিত এই ডকুমেন্টারি ইস্যুতে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
দুই পর্বের ডকুমেন্টারির প্রথম পর্বটি গত ১৭ জানুয়ারি প্রকাশ হয় ইউটিউবে। আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় (আইঅ্যান্ডবি) ইউটিউব এবং টুইটারে দেশটিতে বিবিসির ডকুমেন্টারির প্রথম পর্বটি ব্লক করতে বলার পাশপাশি এ সংশ্লিষ্ট অর্ধ-শতাধিক টুইট মুছে ফেলতে টুইটার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে। বর্তমানে ডকুমেন্টারিটি নিয়ে অনেকের টুইট, ইউটিউব ভিডিও মাইক্রোব্লগিং ও ভিডিও-শেয়ারিং ওয়েবসাইটগুলোতে এ সম্পর্কিত অনেক কিছুই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ভারত সরকার ইতোমধ্যেই মোদিকে নিয়ে করা এ ডকুমেন্টারিকে 'প্রপাগান্ডা' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এই ডকুমেন্টারি খতিয়ে দেখেছে। তাদের দাবি, এই তথ্যচিত্র ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, "তথ্যচিত্রে পক্ষপাতিত্ব ও বস্তুনিষ্ঠতার চরম অভাব রয়েছে। ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকেই এটি নির্মাণ করা হয়েছে।"
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েনও এ ডকুমেন্টারি নিয়ে টুইট করেছেন। টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, "সেন্সরশিপ। বিবিসির ডকুমেন্টারি নিয়ে আমার টুইট মুছে দিয়েছে টুইটার। এটি প্রায় লক্ষাধিক ভিউ পেয়েছিল।"
নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রটি ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ডকুমেন্টারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে যেভাবে পেশ করা হয়েছে, তা তিনি সমর্থন করেন না।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডকুমেন্টারিটি ভারতে ইউটিউবে নেই। তবে কিছু ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারধর্মী উদ্দেশে এই ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে। জানা গেছে, ২০২১ তথ্যপ্রযুক্তি আইনে বিশেষ ক্ষমতাবলে কেন্দ্রের তরফে এই ভিডিওকে ও টুইটগুলোকে ব্লক করার কথা বলা হয়েছে। ইউটিউব এবং টুইটার— উভয় কর্তৃপক্ষ এই আদেশ মানতে সম্মত হয়েছে।
২০০২ সালে যখন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়, তখন ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ভয়াবহ সেই দাঙ্গায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন, যাদের বেশিরভাগই মুসলমান। মূলত হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি ট্রেনে আগুন লেগে ৫৯ জন নিহত হওয়ার পর সহিংসতা শুরু হয়েছিল।
বিবিসির ডকুমেন্টারিতে দেখানো যুক্তরাজ্যের তদন্তের প্রতিবেদনটিতে দাঙ্গার ঘটনাকে 'পদ্ধতিগত সহিংসতা' হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ডকুমেন্টারিতে দাবি করা হয়েছে, এই সহিংসতায় 'জাতিগত নির্মূলের সকল বৈশিষ্ট্য' রয়েছে এবং নরেন্দ্র মোদির ওপর সরাসরি দায় চাপানো হয়েছে। যদিও দেশটির সুপ্রিম কোর্ট মোদিকে গুজরাট দাঙ্গার অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছেন।