বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম লিথিয়ামের খনি আবিষ্কারের দাবি করেছে ইরান
ব্যাটারি তৈরির ক্ষেত্রে অতি প্রয়োজনীয় খনিজ লিথিয়ামের খনি আবিষ্কার করেছে ইরান। দেশটির পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এ খনিতে বিপুল পরিমাণ লিথিয়াম মজুদ আছে বলে দাবি করেছে দেশটি। খবর সিএনবিসির।
গত শনিবার ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে দেশটির শিল্প, খনিজ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মোহাম্মাদ হাদি আহমাদি বলেন, "ইরানে প্রথমবারের মত হামেদান প্রদেশে লিথিয়ামের খনি আবিষ্কৃত হয়েছে।" পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবেই এ প্রদেশটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, খনিটি থেকে প্রায় ৮.৫ মিলিয়ন টনের মতো লিথিয়াম পাওয়া যাবে। বর্তমান বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পের ক্রমবর্ধমান বিকাশের কারণে এ খনিজটি 'সাদা সোনা' নামেও পরিচিত।
বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বড় লিথিয়ামের খনি রয়েছে চিলিতে। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের হিসেব অনুযায়ী, চিলির এ খনিতে প্রায় ৯.২ মিলিয়ন টন লিথিয়ামের মজুদ রয়েছে। তাই ইরান সরকারের দাবি যদি যথার্থ প্রমাণিত হয়, তবে হামেদান প্রদেশের খনিটি বিশ্বের লিথিয়ামের দ্বিতীয় বৃহত্তম আবিষ্কৃত খনি হিসেবে পরিচিতি পাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে লিথিয়াম আয়নের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও মোবাইল ফোনে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য যে ব্যাটারি থাকে, সেগুলোতেও লিথিয়াম ব্যবহার করা হয়।
মোবাইল ফোন ও বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় যৌক্তিকভাবেই লিথিয়ামের চাহিদাও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও গত বছর করোনা মহামারীর কারণে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে অব্যবস্থাপনা ও মূল্যস্ফীতির কারণে খনিজটির দাম ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে বর্তমানে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদনকারী দেশ চীনে এর ব্যবসা কিছুটা কমে যাওয়ার লিথিয়ামের দামও কিছুটা কমেছে।
ইরানের লিথিয়ামের খনি আবিষ্কারের দাবিটি যদি যথাযথ হয়, তবে দেশটির ব্যাটারি শিল্পের জন্য তা এক বিরাট আশীর্বাদ হবে। বর্তমানে দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও বাণিজ্য সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়েছে। এমতবস্থায়, অতি মূল্যবান এ খনিজটির সন্ধান দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে। যদিও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটি ব্যাটারি তৈরি করে বিশ্বের বহু দেশে রপ্তানি করতে বাধার সম্মুখীন হবে।
এমনিতেই রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে বৈশ্বিক বাণিজ্য থেকে ইরানকে অনেকটা একঘরে করে রাখা হয়েছে। সেই সাথে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানের প্রতি রাশিয়াকে অস্ত্র সরবারাহের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও, পুলিশি হেফাজতে কুর্দি নারী মাহসা আমিনির (২২) মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশটিতে নারী অধিকার আন্দোলন ও বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর সরকার বিরোধী অবস্থান জোরালো হয়েছে।
ইরানে আবিষ্কৃত এ বিপুল পরিমান লিথিয়ামের কারণে বৈশ্বিক বাজারে খনিজটির দাম অনেকটা কমে আসতে পারে। তবে এর পুরোটাই নির্ভর করছে এ খনিজটি ইরান ঠিক কতটুকু উত্তোলন করতে পারবে এবং বৈশ্বিক বাজারে তা কী পরিমাণে সরবারাহ করতে পারবে সেটির ওপর।
ইরান খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যের জন্য অনেক আগে থেকেই বিখ্যাত। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল ও গ্যাসের উত্তোলনকারী দেশগুলোর মধ্যেও একটি। তবে চলমান বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটি তেল ও গ্যাস বৈশ্বিক বাজারে সুবিধাজনক দামে বিক্রি করতে পারছে না। বৈশ্বিক তেল ও গ্যাসের সার্বিক যে ব্যবস্থাপনা, সেটিও এর কারণে ব্যাহত হচ্ছে।
গোল্ডম্যান স্যাকস এর বিশ্লেষকদের মতে, সামনে লিথিয়ামের দাম আরও কমবে। ব্যাংকিং কোম্পানিটির ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, আগামী ৯ থেকে ১২ মাসের মধ্যে লিথিয়াম, কোবাল্ট ও নিকেলের দাম কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে লিথিয়ামের সরবারাহ প্রতি বছর ৩৪ ভাগ হারে বৃদ্ধি পাবে। এর নেতৃত্বে থাকবে অস্ট্রেলিয়া ও চীন; যারা কিনা খনিজটির সবচেয়ে বড় সরবারাহকারী দেশ।
অন্যদিকে ভারতেও প্রথমবারের মত লিথিয়ামের খনির সন্ধান মিলেছে। দেশটির জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলার সালাল-হাইমানা এলাকায় এ খনি আবিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। কেন্দ্রীয় খনি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ খনিতে থাকা লিথিয়ামের পরিমাণ প্রায় ৫.৯ মিলিয়ন টন।