ট্রাম্পের অভিযুক্ত হওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কি অনিশ্চিত পথে নিয়ে যাবে!
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান মনোনয়নপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সপ্তাহে মাগশটে অংশ নেবেন, আঙুলের ছাপ দেবেন এবং আদালতে হাজির হবেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০১৬ সালেন নির্বাচনের সময় একজন পর্নো তারকাকে ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছিলেন।
এ প্রথমবারের মতো কোনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হলেন। ম্যানহ্যাটনের আদালতে শুনানির জন্য আগামী ৪ এপ্রিল উপস্থিত হতে পারেন ট্রাম্প।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে সাড়া পড়ে গেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। রয়টার্স-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আমেরিকাকে আরও দ্বিধাবিভক্ত করে দিতে পারে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ঠিক কী ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, ব্যবসায়িক প্রতারণা সম্পর্কিত প্রায় ৩০টির বেশি অপরাধের অভিযোগ রয়েছে সাবেক এ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে।
৭৬ বছর বয়সী ট্রাম্প অবশ্য নিজেকে 'সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ' দাবি করেছেন। তদন্তের মূলে থাকা ম্যানহাটন ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি ও ডেমোক্রেটিক দলের সদস্য আলভিন ব্রাগ তার নির্বাচনের সুযোগ ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইছেন বলেও অভিযোগ ট্রাম্পের।
'আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করতে এগুলো করা হচ্ছে,' এক বিবৃতিতে বলেছেন ট্রাম্প।
একইসঙ্গে মামলাটিতে আইনি লড়াইয়ে সহায়তা করার জন্য সমর্থকদের কাছে তহবিলেরও আবেদন করেছেন তিনি।
গত ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই মিলিয়ন ডলারের তহবিল উত্তোলন করেছেন ট্রাম্প। সমর্থকদেরকে এ ঘটনার প্রতিবাদ করার আহ্বানও করেন তিনি।
অল্পসংখ্যক ট্রাম্প সমর্থক ফ্লোরিডায় তার মার-আ-লাগো এস্টেটের সামনে ২০২৪ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনের পতাকা ও মাগা (মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন) টুপি নিয়ে বৃহস্পতিবার সমাবেশ করেন।
নিউ ইয়র্কে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বেশ কম। সেখানে ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিসের সামনে এক ট্রাম্প সমালোচককে একটি সাইন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। ওই সাইনে লেখা ছিল: 'ওকে জেলে ভরে চাবিটা ছুঁড়ে ফেলে দিন।'
গত মাসে সারা দেশে বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়েছিলেন ট্রাম্প, এরপর থেকে ম্যানহাটনের আদালতের নিরাপত্তা বাড়ায় মার্কিন সরকার।
বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউস বা বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ডেমোক্রেটিক দলের শীর্ষ সিনেটর ও মেজরিটি লিডার চাক শুমার ট্রাম্প সমর্থক ও সমালোচকদের শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি আইন অনুযায়ী চালিয়ে নেওয়ার আহ্বান করেছেন।
আইনি লড়াই
ট্রাম্পের সামনে থাকা অনেকগুলো আইনি চ্যালেঞ্জের স্রেফ একটি এ ম্যানহাটন তদন্ত।
২০২০ সালে জর্জিয়ায় নির্বাচনি হারকে অনৈতিকভাবে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প — এমন সন্দেহে তার বিরুদ্ধে আলাদা একটি ফৌজদারি তদন্ত রয়েছে।
হোয়াইট হাউস ত্যাগ করার পর গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় নথিগুলো কীভাবে সামলেছেন তিনি, সে বিষয়েও বিশেষ কাউন্সিল তার বিরুদ্ধে দুটো তদন্ত চালাচ্ছে।
আগামী মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ম্যানহাটনে যেতে হতে পারে ট্রাস্পকে। সেখানে গিয়ে তিনি আঙুলের ছাপ দেবেন, তার ছবি তোলা হবে। এরপর তিনি একজন বিচারকের সামনে উপস্থিত হবেন, এবং তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হবে।
তবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য কোনো বিচারের জন্য এখনো কমপক্ষে এক বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ এ বিচার নির্বাচনী প্রচারণার আগে বা পরে হতে পারে।
আগামী নির্বাচনে রিপাবলিকান দলে সম্ভাব্য বেশ কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বী মনোনয়নপ্রার্থীর কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছেন ট্রাম্প। এ তালিকায় আছেন ফ্লোরিডার গভর্নমেন্ট রন ডেসান্টিস ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।
পেন্স বলেন, 'এটি আমাদের দেশকে আরও বিভাজিত করার কাজ করবে কেবল।'
অন্যদিকে ডেসান্টিস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগকে 'আমেরিকাসুলভ নয়' বলে মন্তব্য করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে জাতিসংঘে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও রিপাবলিকান মনোনয়নপ্রার্থী নিকি হ্যালি এক টুইটে লেখেন, 'এটি যতটা না বিচার, তার চেয়ে বেশি প্রতিহিংসা।'
মার-আ-লাগো'র সামনে ট্রাম্পের একজন সমর্থক, ৫৭ বছর বয়সী জিল কোহেন বলেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
মাগা ম্যারি পরিচয় দেওয়া আরেক নারীর মতে, এ অভিযোগই ট্রাম্পকে শেষ পর্যন্ত আবার প্রেসিডেন্সি এনে দেবে।
তবে রিপাবলিকান ভোটারদের এ বিষয়ে ভিন্নমতও রয়েছে।
৪৪ শতাংশ রিপাবলিকান মনে করেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলে তার নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে যাওয়া উচিত। গত সপ্তাহে রয়টার্স/ইপসস-এর এক জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
এ মামলা নির্বাচনকে কতটুকু প্রভাবিত করবে, তার নিগূঢ় তাৎপর্য মার্কিন সীমানার বাইরেও দেখা যাবে।
২০১৭ থেকে ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ট্রাম্প বাণিজ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে নিয়মিত মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। ওভাল অফিসে তিনি আবার ফিরলে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাধারণ মানুষদের কাছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চেয়েছে রয়টার্স। সেখানে অনেকেই জানিয়েছেন, তারা মনে করেন ট্রাম্প এ অভিযোগের ঘটনাটি ব্যবহার করে আগামী নির্বাচনে সুবিধা নিতে চেষ্টা করবেন। তবে মার্কিন ভোটারেরা আগের চেয়েও বেশি বিভক্ত হয়ে যাবেন।