দোকানে আর বিক্রি হবে না ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’ ম্যাগাজিন!
একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রাকৃতিক বিষয়বস্তু নিয়ে প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক' এর প্রিন্ট সংস্করণ দোকানে আর কিনতে পাওয়া যাবে না। ম্যাগাজিনটির কার্যক্রম সীমিত করার অংশ হিসেবে আগামী বছরের শুরু থেকে সিদ্ধান্তটি কার্যকর হবে।
এ বিষয়ে ম্যাগাজিনটির এক মুখপাত্র জানান, কোম্পানিটি ডিজিটাল ভার্সনের দিকে বেশি মনোযোগী হতে চাচ্ছে। তবে ম্যাগাজিনটির বিশেষ সংস্করণ প্রিন্ট আকারে দোকানে কিনতে পাওয়া যাবে। এছাড়াও সাবস্ক্রাইব করা গ্রাহকেরা প্রতি মাসে একটি করে প্রিন্ট কপি পাবেন।
দোকানে যে ম্যাগাজিনটির খুব বেশি প্রিন্ট কপি বিক্রি হচ্ছে, তেমনটি নয়। ম্যাগাজিনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দোকানে বিক্রি হওয়া সর্বমোট কপির সংখ্যা ১৮ লাখেরও নিচে।
ওয়াশিংটনের ৩৩ জন একাডেমিক, বিজ্ঞানী ও অভিযাত্রীর হাতে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশন 'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি' কর্তৃক বিখ্যাত এ ম্যাগাজিনটি ১৮৮৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এর পর থেকে হলুদ রঙের বর্ডার করা প্রচ্ছদে আকর্ষণীয় সব ছবি ও মানসম্মত কন্টেন্টের ফলে ম্যাগাজিনটি পাঠকদের নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
কিন্তু সম্প্রতি গণমাধ্যম জগতে চলমান আর্থিক সংকটে শতবর্ষী এ ম্যাগাজিনটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও গত দশকে ম্যাগাজিনটির মালিকানা দুইবার পরিবর্তিত হয়েছে।
প্রথমে ২০১৫ সালে ম্যাগাজিনটি নিয়ে 'টুয়েন্টি ফাস্ট সেঞ্চুরি ফক্স' এর সাথে ৭২৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে লাভজনক চুক্তি করতে রাজি হয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি। এরপর ২০১৯ সালে ফক্স ও ডিজনির মধ্যে ৭১ বিলিয়ন ডলারের বিশাল চুক্তির মাধ্যমে ডিজনি এর মালিকানায় চলে আসে।
'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক' ম্যাগাজিনটি ডিজনির মালিকানায় যাওয়ার পর থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর বিভিন্ন বিভাগ থেকে কয়েক হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। সর্বশেষ ম্যাগাজিনটি নিজস্ব লেখকদেরও বিদায় করে দিয়েছে।
চাকরিচ্যুত লেখকদের পক্ষ থেকে কর্মী ছাঁটাইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এ যাত্রায় ঠিক কতজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক স্থায়ী লেখকদের বাদ দিয়ে এখন প্রদায়ক লেখকদের দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
গত বুধবার ম্যাগাজিনটির সিনিয়র লেখক ক্রেইগ ওয়েলচ টুইটারে বলেন, "আমার হাতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের নতুন কপি এসেছে। এটিতেই আমার ১৬তম ফিচারটি রয়েছে এবং ম্যাগাজিনটির জ্যেষ্ঠ লেখক হিসেবে এটিই আমার শেষ ফিচার। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক তাদের নিজস্ব লেখক সবাইকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করেছে।"
তবে ম্যাগাজিনটির মুখপাত্র ক্রিস আলবার্ট অবশ্য মনে করেন, নিজস্ব লেখকদের ছাঁটাই করার ফলে ম্যাগাজিনের কাজের সক্ষমতায় কোনো পরিবর্তন আসবে না।
এ মুখপাত্র বলেন, "বরং এটি আমাদের ভিন্ন গল্প তুলে ধরতে আরও সুযোগ বৃদ্ধি করবে এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে থাকা পাঠকদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেবে।। সাম্প্রতিক পরিবর্তনের ফলে মানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে যে ধারণা, সেটি একেবারেই ভুল।"
১৯৮০-র দশকে 'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক'-এর জনপ্রিয়তা চূড়া স্পর্শ করে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাগাজিনটির গ্রাহকসংখ্যা ছিল ১ কোটি ২০ লাখ—আর বিদেশেও বিক্রি হতো লাখ লাখ কপি। ভক্তরা এই ম্যাগাজিনটির কপি সংগ্রহে রাখতেন। সংগ্রহ করতে করতে অনেকের এমন অবস্থা হতো যে চিলেকোঠা ও বেজমেন্টও ভরে যেত।
'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক' এখনও আমেরিকার সর্বাধিক পঠিত ম্যাগাজিনগুলোর একটি। যদিও এখন আর আগের মতো কোনো ম্যাগাজিনেরই সুদিন নেই।