যুক্তরাষ্ট্র গোপনে ইরানকে সাবধান করছে; জানালেন ন্যাটোর সাবেক মার্কিন দূত
চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিতে পরস্পর বিপরীতধর্মী অবস্থান নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। এমতবস্থায় ওয়াশিংটন সম্ভবত প্রাইভেট চ্যানেলের মাধ্যমে ইরানকে সাবধান করছে; এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সাবেক এক মার্কিন দূত। খবর বিবিসির।
ন্যাটোর সাবেক মার্কিন দূত ইভো ডালডার বিবিসির নিউজ ডে প্রোগ্রামে এই কথা বলেছেন। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেছেন।
ইভো ডালডার বলেন, "আমরা জানি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিশেষভাবে তৈরি প্রাইভেট চ্যানেলের মাধ্যমে গোপনে যোগাযোগ করছে। এক্ষেত্রে ইরান নিঃসন্দেহে জানে যে, যুক্তরাষ্ট্র কী করতে প্রস্তুত। তবে এটি এমন কিছু নয় যা এই মুহুর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে বলবে। সম্ভবত সেটা বলা উচিতও নয়।"
চলতি সপ্তাহের শুরুতে অবশ্য হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান জানান, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইরানের সাথে আলোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে সংঘাতে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে তেহরানকে সাবধান করেছে ওয়াশিংটন।
এদিকে গত কয়েকদিনে ইরান কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, ইসরায়েল স্থল অভিযান চালালে কড়া জবাব দেওয়া হবে। পরিণতি ভোগ করা ছাড়া ইসরায়েলকে গাজা উপত্যকায় কোনো পদক্ষেপ নিতে দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমিরাবদুল্লাহিয়ান।
আমিরাবদুল্লাহিয়ান বলেন, "প্রতিরোধের নেতারা ইহুদিবাদী শাসককে গাজায় কোনো পদক্ষেপ নিতে দেবে না। বিকল্প সকল পথ খোলা রয়েছে। গাজার জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের ব্যাপারে আমরা উদাসীন থাকতে পারি না।"
ইরান মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে অর্থ ও অস্ত্র সহযোগিতা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী লেবাননের হিজবুল্লাহ; যাদের অবস্থান ইসরায়েলের ঠিক উত্তর সীমান্তে।
গত ১৩ অক্টোবর লেবাননে অবস্থানকালে আমিরাবদুল্লাহিয়ান বলেন, "গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ চলতে থাকলে লেবানন সীমান্তে যুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট তৈরি হওয়ার 'সব ধরনের সম্ভাবনা' রয়েছে।"
ইসরায়েল ও লেবানন ২০০৬ সালে মারাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল; যাতে ইসরায়েলের আধুনিক যুদ্ধ ট্যাঙ্কগুলি লুকানো মাইন এবং সুপরিকল্পিত অ্যামবুসের কাছে বেশ ধরাশায়ী হয়েছিল। এরপর থেকে হিজবুল্লাহ ইরানের সাহায্যে ধীরে ধীরে পুনরায় সশস্ত্র হয়েছে। এখন ধারণা করা হয় যে, গোষ্ঠীটির কাছে প্রায় দেড় লাখ রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকগুলি দূরপাল্লার এবং নির্দিষ্ট স্থানে অনেকটা নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম।
এমতাবস্থায় ইসরায়েল যদি গাজা আক্রমণ করে তবে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে যুদ্ধের একটি নতুন ফ্রন্ট খুলতে পারে। এতে করে ইসরায়েলকে গাজায় হামাসের পাশাপাশি নতুন আরেকটি ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে বাধ্য করবে।
বর্তমানে ইসরায়েলের সাথে লড়াইয়ের জন্য হিজবুল্লাহ অনেকটা প্রস্তুত রয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ইসরায়েলের সাহায্যে ভূমধ্যসাগরে অবস্থানের ঘোষণার পর এই আশঙ্কা যেন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এক্ষেত্রে আশঙ্কা রয়েছে যে, চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে ইরানের সম্পৃক্ততা যুদ্ধটিকে মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত করতে করতে পারে। কেননা গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামাসের হামলাকে অনেকটা প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে ইরান। অন্যদিকে ইরানের সাহায্যে পরিচালিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ সম্প্রতি প্রায়শই ইসরায়েল সেনা সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।