আরও ভালো লিডার হতে চান? নির্ধারিত সময়ে ও সংখ্যায় কম মিটিং করুন
আমার সহকর্মী ও আমি একবার ভাবলাম যে, ঠিক কতগুলো মিটিং আমরা সময়মতো শুরু করেছি সেটা খুঁজে বের করি। সেক্ষেত্রে দেখা গেল যে, আমাদের করা প্রায় ৭০০ মিটিংয়ের মাত্র তিনটি আমরা সময়মতো শুরু করেছিলাম।
কোনো বিষয় সম্পর্কে আলোচনা বা সিদ্ধান্ত নিতেই মিটিং ডাকা হয়। সেক্ষেত্রে সেখানে সচারাচর যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়, তাদের সবাইকে সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়৷
তাই এক বা একাধিক মানুষ দেরি করে আসলে স্বাভাবিকভাবেই মিটিং দেরি করে শুরু হয়। আর এই দেরি করে শুরু করাতেই ঐ মিটিংয়ের কার্যকারিতা কমে যায়।
২০১৮ সালে 'জার্নাল অফ অর্গানাইজেশনাল বিহেভিয়ার' এ প্রকাশিত পেপার অনুযায়ী, দেরিতে শুরু হওয়া মিটিংগুলি কেবল সময়ের অপচয় কিংবা বিরক্তির কারণই নয়। বরং একইসাথে দেরিতে শুরু হওয়া মিটিংগুলিও অনেক কম ফলপ্রসূ হতে পারে।
ঐ পেপারে গবেষকেরা বলেন, "মিটিং যদি ১০ মিনিট পর শুরু হয় তবে ঐ মিটিংয়ের কার্যকারিতা এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন আইডিয়া তৈরীর প্রবণতাও প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণে কমে যেতে পারে।
একটি সচারাচর মিটিংয়ের কথা চিন্তা করুন৷ সেক্ষেত্রে কেউ দেরিতে আসছে, কেউবা আবার অপেক্ষা করা অবস্থায় গল্প করছে। সকলে যদি সময়মতো এসেও পরে তবুও নির্ধারিত সময়ের পর কয়েক মিনিট গল্প করে বলা হয় যে, আসুন এবার তবে মিটিং শুরু করা যাক।
এর মাঝে যে অতিরিক্ত আলাপ কিংবা গালগল্প করা হলো, সেটির ফলে কিছুটা হলেও মিটিংয়ের ওপর ফোকাস ও উৎসাহ কমে আসলো।
জার্নালে প্রকাশিত পেপারে দেখা যায়, দেরি করে শুরু করা মিটিং অপেক্ষাকৃত বেশিবার বাধাপ্রাপ্ত হয়, আশেপাশে কথা হয়, অপ-টপিক বেশি আসে। তাই কোনো কারণ না দেখিয়ে বরং অবশ্যই সঠিক সময়ে মিটিং শুরু করা উচিত।
শুধু মিটিংয়ের কার্যকারিতা কমানো নয়, বরং দেরিতে পৌঁছানো সার্বিকভাবেও বেশ নেতিবাচক আচরণ। দেরিতে পৌঁছানো মানে বোঝায় আপনার সময় অন্য লোকেদের চেয়ে বেশি মূল্যবান।
এক্ষেত্রে কেউ যদি সত্যিকার অর্থেই বেশ ব্যস্ত হয়ে থাকে তবে তার উচিত হবে মিটিংয়ের সংখ্যা কমিয়ে আনা। শুধু বেশি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংগুলোতেই সঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়া।
এক দশকব্যাপী করা একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, ৯০ ভাগ কর্মীই মনে করেন যে, মিটিং বেশ ক্ষেত্রবিশেষে বেশ অকার্যকর একটি বিষয়। তাদের এই ধারণার বৈজ্ঞানিক যুক্তিও রয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, মিটিংয়ের পরিমাণ ৪০ ভাগ পর্যন্ত কমিয়ে আনলে কর্মীদের কর্মদক্ষতা ৭০ ভাগ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
একইসাথে দেখা যায়, মিটিং কম হলে কর্মীদের মাঝে পারস্পরিক যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধি পায়। কেননা এতে করে তারা সরাসরি কথা বলে; ডকুমেন্ট নিয়ে প্রতিনিয়ত আলাপ-আলোচনা করে। মিটিংয়ের আশায় বসে থাকে না।
একইসাথে মিটিংয়ের হার শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত কমিয়ে আনলে শতকরা ৬০ ভাগ পর্যন্ত চাপমুক্ত হয়। কর্মদক্ষতা ৭৪ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তাই সবসময় উচিত প্রয়োজনের অধিক মিটিং না করা এবং সঠিক সময়ে মিটিং শুরু করা।