আম্বানির ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে কেন বিল গেটস, জাকারবার্গ ও ইভাঙ্কা ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিরা?
ভারতের বিজনেস টাইকুন মুকেশ আম্বানির ছেলে অনন্তর বিয়ে উপলক্ষ্যে ভারতে বসেছে তারকাদের মিলনমেলা। অনুষ্ঠানে অতিথিদের যাতায়াতের জন্য রাখা হয়েছে চার্টার জেট। একইসাথে সেখানে পারফর্ম করেছেন বিখ্যাত সংগীতশিল্পী রিহানা।
এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অংশ নেওয়া অতিথিদের মধ্যে রয়েছে বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ, ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও সুন্দর পিচাইয়ের মতো ব্যক্তিত্বরা। আর দেশি অতিথিদের মধ্যে গৌতম আদানি, শাহরুখ, সালমান থেকে শুরু করে তারকা ক্রিকেটারদেরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ফোর্বসের হিসেব মতে, বর্তমানে আম্বানির মোট সম্পদের পরিমাণ ১১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এশিয়ার সর্বোচ্চ এই ধনী ব্যক্তি জমকালো সব অনুষ্ঠান আয়োজন করে এর আগেও সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন।
এক্ষেত্রে প্রি ওয়েডিং অনুষ্ঠানটি শুধু সামাজিক আবহের মধ্যেই আর সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং এটি একদিকে প্রযুক্তি, আর্থিক এবং মিডিয়া খাতে আম্বানি পরিবারের প্রভাবকে তুলে ধরছে। একইসাথে বিদেশি কোম্পানিগুলির কাছে ভারতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকেও যেন প্রকাশ করছে।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ৪২ ভাগ শেয়ারের মালিক মুকেশ বর্তমানে বিশ্বের ১১ তম ধনী ব্যক্তি। সেক্ষেত্রে তার ছোট ছেলে বিয়ে করতে যাচ্ছেন দীর্ঘদিনের প্রেমিকা রাধিকা মার্চেন্টকে। তিনি বিশিষ্ট শিল্পপতি বীরেন মার্চেন্টের কন্যা।
ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যবসায় বড়ও রকমের দখল তাকে পশ্চিমা কোম্পানিগুলির বন্ধুতে পরিণত করেছে। তার হাত ধরেই বড় বড় কোম্পানিগুলো অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভারতীয় বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে৷
এই সূত্র ধরেই মেটা, অ্যালফাবেট, কোয়ালকম ও ইনটেলের মতো জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্সের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান জিও-তে বিনিয়োগ করেছে।
মার্কিন বড় বড় ব্যবসায়ীরা আম্বানি ও রিলায়েন্সের সাথে সম্পর্ক জোরদারে বেশ আগ্রহী। কারণ ভারত শতকোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশ হওয়ায় লাভজনক ব্যবসার বেশ উপযুক্ত জায়গা।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে রয়েছে সস্তা শ্রমের অঢেল সরবরাহ। এছাড়া অনেকের মধ্যে রয়েছে কারিগরি প্রতিভার পাশাপাশি ইংরেজির ওপর শক্ত ভাষাগত দক্ষতা।
চীনে মহামারি চলাকালীন কারখানাগুলির দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। দেশটিতে অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ এবং অর্থনৈতিক জটিলতা রয়েছে। ফলে বহু মার্কিন কোম্পানি বিশ্বব্যাপী নিজেদের কার্যক্রমকে প্রসারিত করতে বেইজিং অপেক্ষা নয়াদিল্লীর ওপরই বেশি ভরসা রাখতে চাইছে।
অন্যদিকে ভারতও একটি প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক বিপ্লবের মধ্যে রয়েছে। তাদের আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে আরও বেশি সংখ্যক ভারতীয় ডিজিটাল অর্থপ্রদান, অনলাইন যোগাযোগ এবং ই-কমার্স সেবা গ্রহণ করছে।
অ্যাপল সিইও টিম কুক গত বছরের মে মাসে বলেন, "ভারতে অনেক লোক মধ্যবিত্তের ঘরে প্রবেশ করছে। আমি আশাবাদী যে, আমরা তাদের কিছু সংখ্যক লোককে আইফোন কিনতে প্রলুব্ধ করতে পারব।"
গত আগস্টে অন্য একটি অনুষ্ঠানে কুক বলেন, "অ্যাপল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন বাজারে (ভারত) একটি 'খুব বেশি ভালো' অবস্থায় রয়েছে। যা ভারতে কোম্পানির জন্য একটি 'বিশাল সুযোগ' তৈরি করেছে।"
টিম কুকের মন্তব্য থেকেই বোঝা যায় কেন অ্যাপল গত বছর ভারতে নিজেদের প্রথম দুটি স্টোর খুলেছিল। একইসাথে গত বছরের শেষ তিন মাসে দেশটি থেকে কোম্পানিটি আয়ের একটি নতুন রেকর্ড গড়েছিল।
এদিকে গত এপ্রিলে নেটফ্লিক্সের কো-সিইও টেড সারানডোস ভারতকে 'বিনোদন-প্রেমী মানুষের বিশাল জনসংখ্যার' দেশ বলে আখ্যায়িত করে দেশটিতে ব্যবসা করাকে 'বড় পুরস্কার' হিসাবে অভিহিত করেছেন।
এদিকে মেটা তার সাম্প্রতিক বার্ষিক প্রতিবেদনে ভারতের প্রশংসা করেছেন। কেননা গতবছর মেটার সক্রিয় ব্যবহারকারীদের বৃদ্ধি পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি অন্যতম।
অন্যদিকে অ্যামাজনের ক্ষেত্রে গত বছরের শেষ তিন মাসে গ্রেট ইন্ডিয়ান ফেস্টিভ্যাল সেল ইভেন্টের সময় প্রায় ১ বিলিয়ন গ্রাহক তাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করেছে। আর এরমধ্যে ৪ মিলিয়ন গ্রাহক প্রথমবারের মতো সাইটটি থেকে কেনাকাটা করেছে।
এদিকে মাইক্রোসফট ভারতকে লিংকডইন সদস্য বৃদ্ধির মূল চালক হিসাবে অভিহিত করেছে। গতবছরের প্রথম তিন মাসের হিসেবে প্ল্যাটফর্মটির সদস্য সংখ্যা বছরে ১৯ ভাগ বেড়ে ১০০ মিলিয়নে পৌঁছেছে।
সেক্ষেত্রে ভারত স্পষ্টতই কয়েকটি বৃহত্তম মার্কিন কোম্পানির ব্যবসার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা ভারতীয় বাজারে নিজের কার্যক্রম আরও প্রসারিত করতে আগ্রহী।
এক্ষেত্রে অনন্ত আম্বানির প্রি-ওয়েডিং অনুষ্ঠানটি ভারতের অন্যতম শক্তিশালী পরিবারটির সাথে কোম্পানিগুলোর সম্পর্ক বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করেছে। সেক্ষেত্রে বিয়ের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যবসায়িক নানা চুক্তি নিয়েও আলোচনা করা যাবে। তাই বিশ্বের বড় বড়ও ব্যবসায়ী ও তারকাদের এই বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার খবরে খুব বেশি অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই।