গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তার অনুমতি দিতে ইসরায়েলকে নির্দেশ আন্তর্জাতিক আদালতের
দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে গাজায় মানবিক সহায়তা কর্মসূচির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে)। খবর বিবিসির।
আদালত তার সিদ্ধান্তে জানিয়েছে, কোনো ধরনের 'বিলম্ব ছাড়া' ইসরায়েলকে জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় মৌলিক পরিষেবা ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের ব্যবস্থার অনুমতি দিতে হবে।
আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হতে পারে- এমন আশঙ্কার মধ্যে আদালতের পক্ষ থেকে এ নির্দেশ এল।
তবে গাজায় সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করে ইসরায়েল বলছে, এ অভিযোগ 'সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন'।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আদালতের নির্দেশের জবাবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এটি স্থল, জল ও আকাশপথে গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিতের বিষয়ে নতুন নতুন উদ্যোগ ও বিদ্যমান সহায়তা কর্মসূচি বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।
একইসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে যুদ্ধ ও গাজার এই পরিস্থিতির জন্য হামাসকেই দায়ী করা হয়েছে।
এর আগে গত জানুয়ারিতে গাজায় গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ বেশ কিছু সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় দিন দিন 'বিপর্যয়কর' পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার ২.২ মিলিয়ন মানুষের সবাই 'উচ্চ মাত্রার তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি।' আগামী মে মাস শেষ হওয়ার আগেই গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ শুরু হতে পারে।
রুলে আদালত বলেছে, গাজা 'এখন শুধু দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মুখেই নয়', বরং 'দুর্ভিক্ষ শুরু হচ্ছে'।
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের মতে, গাজায় ইতোমধ্যেই ২৭ শিশুসহ ৩১ জন অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় মারা গেছে।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছিলেন, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে ইসরায়েলের ব্যাপক বিধি-নিষেধের কারণেই গাজায় 'ক্ষুধা, অনাহার ও দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
তিনি সম্প্রতি বিবিসিকে বলেছেন, যদি প্রমাণ হয় যে গাজার বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ইসরায়েল ক্ষুধা বা অনাহারকে ব্যবহার করছে, তাহলে এটি যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য হবে।
আন্তর্জাতিক আদালতের এই আদেশে গাজায় জরুরি প্রয়োজনীয় পরিষেবা ও মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে কালক্ষেপণ না করে ইসরায়েলকে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এও বলা হয়েছে যে গাজাবাসীর জন্য এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পোষাক, আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় ওষুধ।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মিসরের সীমান্তে গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা ত্রাণ সহায়তার ট্রাকের সারি কেবল দীর্ঘই হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে ইসরায়েল এসব ট্রাকে অযৌক্তিকভাবে তল্লাশি চালাচ্ছে। যে কারণে ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না।
তবে ইসরায়েল জাতিসংঘের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলছে, গাজায় যে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করছে, সেগুলোর বেশিরভাগই হামাস নিয়ে যাচ্ছে। বেসামরিক লোকদের ত্রাণ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘ।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। এতে এ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। জিম্মি হয় ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ। কয়েক ধাপে জিম্মিদের মুক্তি দিলেও হামাসের হাতে এখনও ১৩০ জন জিম্মি রয়েছে ও অন্তত ৩৪ জন মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে হামাসের হামলার জবাবে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সাড়ে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ৩২ হাজার ৬২৩ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আড়াই হাজারের বেশি নারী ও শিশু।
এদিকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হলেও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক