কোকোর দাম আকাশচুম্বী, বিশ্বব্যাপী বাড়ছে চকোলেটের দাম
চকোলেট তৈরি হয় কোকো বা কোকোয়া বীজ থেকে। আর বিশ্বের ৬০ শতাংশেরও বেশি কোকো বীজ উৎপাদন হয় আফ্রিকার দেশ ঘানা এবং আইভেরি কোস্টে। গত মৌসুমে এল নিনোর কারণে সৃষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের ফলে এ ফসলের উৎপাদন কম হয়েছে। আর চকোলেট তৈরির মূল এ উপাদানটির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সরাসরি প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক চকোলেটের বাজারে।
কোকো ঘাটতির কারণে নিউইয়র্কে চকোলেটের দাম অন্তত দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে দাম ক্রমান্বয়ে আরও বৃদ্ধি পাবে।
গত এক বছরে কোকোর দাম তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে এবং ২০২৪ সালে ১২৯ শতাংশ বেড়েছে। প্রথমবারের মতো সারাবিশ্বে কোকোর দাম টনপ্রতি ১০ হাজার ডলারের ওপরে পৌঁছেছে।
২০ জনেরও বেশি কৃষক, বিশেষজ্ঞ এবং শিল্প সংশ্লিষ্টরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ব্যাপক অবৈধ সোনার খনি, জলবায়ু পরিবর্তন, খাতের অব্যবস্থাপনা এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোগ কোকো উৎপাদন হ্রাসের জন্য দায়ী।
২০১৮ সাল থেকে সংকলিত এবং রয়টার্স কর্তৃক প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ঘানার কোকো বিপণন বোর্ড কোকোবোড অনুমান করছে আনুমানিক ৫৯০,০০০ হেক্টর (১.৪৫ মিলিয়ন একর) জমির কোকো গাছ ফুলে যাওয়া অঙ্কুর রোগে আক্রান্ত হয়েছে, যার ফলে অনেক কোকো গাছ মারা যেতে পারে।
কোকোবোডের মতে, ঘানায় বর্তমানে প্রায় ১.৩৮ মিলিয়ন হেক্টর (৩.৪১ মিলিয়ন একর) জমিতে কোকো চাষ হয়। তবে কোকোবোড বলছে সংক্রামিত গাছগুলো এখনও কোকো উৎপাদন করতে সক্ষম।
ট্রপিক্যাল রিসার্চ সার্ভিসের কোকো বিশেষজ্ঞ স্টিভ ওয়াটারেজ বলেন, 'কোকো উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে কমছে। আমরা গত বছর ঘানায় ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং আইভরি কোস্টেও আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ফলন দেখতে পেয়েছি।'
রাবোব্যাংকের পণ্য বিশ্লেষক পল জুলস বলেন, বিশ্ব ৬০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় কোকো সরবরাহের ঘাটতির মুখোমুখি হচ্ছে এবং ভোক্তারা এই বছরের শেষে বা ২০২৫ সালের প্রথম দিকে এর প্রভাব দেখতে শুরু করতে পারেন। আন্তর্জাতিক কোকো সংস্থা ২০২৩-২৪ মৌসুমে ৩ লাখ ৭৪ হাজার টন সরবরাহ ঘাটতির পূর্বাভাস দিয়েছে, যা আগের মৌসুমে ৭৪ হাজার টন ঘাটতি থেকে ৪০৫ শতাংশ বেশি।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা রয়টার্সকে বলেছেন, এই জটিল সমস্যার এখনও কোনো সহজ সমাধান নেই। কোকো বাজার এখন অস্থির এবং এর কারণে পশ্চিম আফ্রিকার কোকো আধিপত্যের অবসানের সূচনা হতে পারে। এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে লাতিন আমেরিকার কোকো ব্যবসায়ীরা।
শুধু পশ্চিম আফ্রিকার লাখ লাখ কোকো চাষিই না, আগামী বছরগুলোতে ধনী দেশগুলোর চকোলেটের বাজারও এর কারণে প্রভাবিত হবে।
গবেষণা সংস্থা নিয়েলসেনআইকিউ-এর তথ্য অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইস্টার ক্যান্ডি কেনা লোকেরা লক্ষ্য করছেন যে গত বছরের তুলনায় চকোলেটের দাম ১০% এরও বেশি বেড়েছে।
যেহেতু চকোলেট নির্মাতারা সাধারণত কয়েক মাস আগে থেকে কোকো কিনে রাখে, বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন পশ্চিম আফ্রিকার উদ্ভূত পরিস্থিতি এই বছরের শেষের দিকে ভোক্তাদের প্রভাবিত করবে।
ক্লেওস অ্যাডভাইজরির আফ্রিকা-কেন্দ্রিক পণ্য বিশেষজ্ঞ টেড জর্জ বলেন, 'আমরা যে ধরনের চকোলেট বার খেতে অভ্যস্ত, এটি একটি বিলাসিতায় পরিণত হতে চলেছে। এটি দ্বিগুণ ব্যয়বহুল হতে চলেছে।'
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন