ইচ্ছে করে সবচেয়ে খারাপ পোশাক পরে অফিসে আসে তারা: চীনের যুবকেরা কেন এমন করছে?
চীনে নতুন ধরনের 'গেট রেডি উইথ মি' ভিডিও তৈরির ট্রেন্ড চলছে। এটি মূলত কে কত 'জঘন্য' পোশাক পড়ে কাজে যেতে পারে তার চ্যালেঞ্জ নেওয়া।
সম্প্রতি চীনের তরুণেরা কর্মক্ষেত্রে খারাপ বস, নেতিবাচক কর্মপরিবেশ, কম বেতন এবং দীর্ঘ কর্মঘণ্টা প্রভৃতির বিরুদ্ধে এক ব্যতিক্রম বিদ্রোহ শুরু করেছে।
তারা নিজেদের সবচেয়ে খারাপ পোশাক, পায়জামা, জুতা পরে অফিসে যাচ্ছে এবং আনন্দের সঙ্গে নিজেদের এসব উদ্ভট ছবি অনলাইনে পোস্ট করছেন।
কয়েক মাস ধরে চীনা সামাজিক মাধ্যম ডোয়িন (টিকটকের চীনা সংস্করণ) ব্যবহারকারীরা #গ্রসআউটফিটফরওয়ার্ক, #আগলিক্লোথসশুডবিফরওয়ার্ক এর মতো বিভিন্ন পোস্ট দিচ্ছে।
এই প্রতিবাদকারীরা অন্যদেরও এই ট্রেন্ডে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কে সবচেয়ে 'খারাপ' পোশাক পরতে পারে আমরা তার প্রতিযোগিতা শুরু করছি।
'গ্রসআউটফিটফরওয়ার্ক'- হ্যাশট্যাগটি কেবল চীনা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ওয়েইবোতে ১৪০ মিলিয়নেরও বেশি ভিউ পেয়েছে এবং এতে দশ হাজারের বেশি মন্তব্য পড়েছে।
ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ডোয়িন ব্যবহারকারী কেন্ডো এস এর একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছিল।
সেই পোস্টে দাবি করা হয়েছিল, তার বস তার পোশাককে 'জঘন্য' বলেছে এবং এই পোশাক পরার জন্য তাকে শাস্তি দিয়েছেন।
ওই নারী বলেন, ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে বাঁচতে তিনি ওই জবরজং পোশাক পরেছিলেন।
পরে একটি ভিডিওতে কেন্ডো নেটিজেনদের তার সেই সমালোচিত পোশাক দেখিয়েছেন। তার ওই ভিডিওতে ৭ লাখ ৫২ হাজারের বেশি লাইক পড়েছে এবং ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি বার রিপোস্ট করা হয়েছে।
এই পোস্টের মতোই আরেক নারী তার নিয়ন হলুদ ভেস্ট এবং হাঁটু সমান ব্যাগি শর্টস পরা ছবি পোস্ট করেছেন। এর সঙ্গে তিনি লিখেছেন, 'আমার সহকর্মী বলেছেন আমি নাকি বনমানুষের মতো পোশাক পরি।'
আরেকজন কমেন্ট সেকশনে একটি নোংরা হলুদ এবং নীল জ্যাকেট পরা ছবি দিয়ে লিখেছেন, 'আমার বস আমাকে আমার কাপড় ধোয়ার জন্য ৫০ ইউয়ান (প্রায় ৭ ডলার) দিয়েছিলেন এবং আমাকে আর কখনও ক্লায়েন্টদের সঙ্গে হাত মেলাতে নিষেধ করেছেন।'
আরেকটি পোস্টে একজন লিখেছেন, 'এত কম বেতন, জঘন্য সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করে, আমার থেকে আপনারা আর কী পোশাক আশা করেন?'
'তাং পিং' বা 'লাইং ফ্ল্যাট' প্রতিবাদের পরে, এবার চীনের তরুণেরা 'গ্রস আউটফিট মুভমেন্ট' শুরু করেছে।
অর্থনৈতিক হতাশা এবং রেকর্ড বেকারত্বের হারের চাপে পৃষ্ট চীন। দেশটির বহু তরুণ বর্তমানে 'চাকরি ছাড়ার পার্টি' আয়োজন করছেন।
পড়াশোনা শেষের পর চীনের তরুণেরা একটি কঠিন চাকরির বাজারে পা রাখছে।
জানুয়ারিতে দেশটির সরকার জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১৪.৯%।
পাঁচ মাস বিরতির পর প্রকাশিত এই পরিসংখ্যানে ৬ কোটি ২০ লাখ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এর আগে জুন মাসে এই হার ছিল ২১.৩ শতাংশ।
সাংহাই ও সিউলভিত্তিক সৃজনশীল, জনসংযোগ ও ফ্যাশন ব্র্যান্ডের ব্র্যান্ড কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান বোহ প্রজেক্টের প্রতিষ্ঠাতা ২৯ বছর বয়সী বোহান কিউ বলেন, যেখানে আপনার কাজের এবং ভবিষ্যৎ জীবনের তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই, সেখানে সবাই তো বিরক্ত হবেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ট্রেন্ড সম্পর্কে কিউ বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন কাজের জন্য সাধারণ পোশাক পরার চল চীনে সসসময়ই জনপ্রিয় ছিল এবং আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করা মানুষেরা এই ট্রেন্ডে অংশ নিয়েছেন হয়ত। এছাড়া মহামারি চলাকালীন বাসায় থেকে কাজ করতে অভ্যস্ত তরুণ প্রজন্মও এতে অংশ নিয়ে থাকতে পারে।
কিউ আরও বলেন, তার কর্মীরা ভাইরাল ভিডিওর লোকজনের মতো পোশাক না পরলেও, তারাও নিম্নমানের পোশাক পরেন।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা সোয়েটপ্যান্ট, শর্টস, স্যান্ডেল এবং এ জাতীয় পোশাক পরে আসে। যদি এগুলো দেখতে অশোভন না লাগে, তাহলে আমার সমস্যা নেই।
অন্যদিকে, চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তরুণদের সাম্প্রতিক এই ট্রেন্ডের সমালোচনা করেছে।
পিপলস ডেইলি কর্মক্ষেত্রে কুৎসিত পোশাক পরার ঘটনাটিকে এক ধরনের 'আত্ম-প্রবঞ্চনা' বলে অভিহিত করেছে।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি