ছয় বছরের মধ্যেই পড়ে যাওয়া দাঁত নতুন করে গজাবে!
মানুষের দেহে ক্যালসিয়াম, খনিজ পদার্থ এবং কোলাজেন দিয়ে তৈরি ২০৬টি হাড় রয়েছে। হাড় শক্ত হলেও অনেকসময় দুর্ঘটনা বা অন্য কারণে ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু ভেঙে গেলেও পুনরায় সেটি জোড়া লেগে যায়। বয়স ভেদে হাড় জোড়া লাগতে আলাদা সময় লাগতে পারে।
মানুষের দাঁত হাড়ের মতো খুব শক্ত হওয়া সত্ত্বেও (এনামেল এর জন্য দাঁত শক্ত হয়) ক্ষতিগ্রস্ত হলে আবারো সেরে উঠতে পারে। কিন্তু সম্প্রতি জাপানি বিজ্ঞানীরা একটি নতুন ওষুধ পরীক্ষা করছেন যা মানুষের দাঁত পুনরায় গজাতে সাহায্য করতে পারে। সেপ্টেম্বর থেকে মানুষের ওপর এর পরীক্ষা চালানো হবে।
নতুন দাঁত গজানোর ওষুধ বাজারে নিয়ে আসার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে জাপানের স্টার্টআপ তোরেগেম বায়োফার্মা।
জাপান টাইমস-এর তথ্যানুসারে, কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে তোরেগেম বায়োফার্মার নেতৃত্বাধীন একটি দল গত কয়েক বছর ধরে এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। মানুষের নতুন দাঁত গজাতে এবং জন্মগত কারণে যাদের পুরো এক পাটি দাঁত নেই, তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধটি সাহায্য করবে।
জাপানের ওসাকায় মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউট কিটানো হাসপাতালের দন্তচিকিৎসা এবং ওরাল সার্জারি বিভাগের প্রধান কাৎসু তাকাহাশি প্রধান গবেষক হিসেবে কাজ করছেন ওষুধটি নিয়ে।
তাকাহাসি বলেছেন, "দাঁতের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য আমরা কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। যদিও দাঁতের সমস্যার কোন স্থায়ী চিকিৎসা নেই, আমাদের মনে হয় দাঁত পুনরায় গজানোর ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ অনেকদিনের।"
কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে মিলে তাকাহাসির দল একটি জিন শনাক্ত করেন, যেটি ইউএসএজি-১ প্রোটিন উৎপাদনের জন্য দায়ী--যা দাঁত গজানোর সংখ্যা সীমাবদ্ধ করে ফেলে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞানীদের ইঁদুরের দাঁত গজানোর সঙ্গে কোন জিন সম্পর্কিত, তা অন্বেষণে গবেষণা করে দেখে তাকাহাশির দল ইউএসএজি-১ প্রোটিনকে টার্গেট করে একটি অ্যান্টিবডি তৈরির উদ্যোগ নেন, যা বাড়তি দাঁত গজানো ত্বরান্বিত করে।
দাঁতের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে যে ইউএসজি-১ প্রোটিন, সেই প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় তাদের তৈরি ওষুধ।
২০১৮ সালে ল্যাবরেটরিতে প্রাথমিক পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। পরীক্ষায় দেখা যায়, স্বাভাবিকসংখ্যক দাঁত রয়েছে এমন একটি ইঁদুরকে এই অ্যান্টিবডিভিত্তিক ওষুধ দেওয়ার পর প্রাণীটির নতুন দাঁত গজিয়েছে। ইঁদুরের ওপর সফল পরীক্ষা চালানোর পর দলটি ফেরেটের ওপর পরীক্ষানিরীক্ষা চালায়।
এই ওষুধ নিরাপদ কি না, তা নিশ্চিত করতে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাবে তোরেগেম বায়োফার্মা।
সেপ্টেম্বরে মানুষের উপর শুরু হওয়া পরীক্ষাটি ১১ মাস স্থায়ী হবে। অন্তত একটি দাঁত নেই এরকম ৩০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী ৩০ জন পুরুষের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হবে।
ওষুধটি ইঞ্জেকশনের (আইভি) মাধ্যমে দেওয়া হবে। যা পশুর ওপর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না দেখালেও মানুষের ওপর এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটি চালানো হবে।
সফল হলে কিটানো হাসপাতাল অন্তত চারটি দাঁত নেই এরকম ২ থেকে ৭ বছর বয়সী বাচ্চাদের ওপর ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে। ২০৩০ সালের মধ্যেই ওষুধ বাজারে আনার পরিকল্পনা করছেন তাকাহাসি।
যদিও বর্তমানে জন্মগত দাঁতের সমস্যা আছে এমন রোগীদের ওপর ওষুধটি ব্যবহার করা হচ্ছে, তাকাহাশি আশা করেন যে দাঁত হারিয়েছেন এমন ব্যক্তিও এ চিকিৎসা নিতে পারবেন।