এক পায়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন? উত্তরটি আপনার পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি নির্ণয়ে সাহায্য করবে
সম্প্রতি মায়ো ক্লিনিকের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, আপনি কতক্ষণ এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন, তা বয়সের সঙ্গে শারীরিক শক্তি কমে যাওয়ার একটি সুস্পষ্ট লক্ষণ হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে হাঁটার গতি, বাহুর শক্তি বা হাঁটুর জোরের তুলনায় এক পায়ে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতা দ্রুত কমে যায়।
এই ক্রস-সেকশনাল গবেষণায় ৫২ থেকে ৮৩ বছর বয়সি ৪০ জন ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন।
গবেষণার সিনিয়র লেখক এবং মায়ো ক্লিনিকের মাসকুলোস্কেলেটাল রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক কেন্টন কফম্যান বলেন, "শরীরের ভারসাম্য কমে গেলে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।"
তিনি বলেন, "এক পায়ে ভারসাম্য ধরে রাখার ক্ষমতা মানুষের পড়ে যাওয়ার ঝুঁকির একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাভাস।"
কফম্যান আরও বলেন, "যদি কেউ পাঁচ সেকেন্ডও এক পায়ে ভারসাম্য ধরে রাখতে না পারেন, তাহলে তার গুরুতরভাবে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে, যদি কেউ ৩০ সেকেন্ড ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন, তবে তা তার স্বাস্থ্য ভালো থাকার ইঙ্গিত দেয়, বিশেষ করে যদি ব্যক্তি বয়স্ক হন।"
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিংয়ের তথ্যমতে, প্রতি বছর ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সি প্রতি চারজনের মধ্যে একজন পড়ে গিয়ে আহত হন, যা বয়স্কদের মধ্যে আঘাত এবং আঘাতজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের সর্বোচ্চ ১৭ সেকেন্ড ধরে তাদের অ-প্রধান পায়ে দাঁড়াতে দেখা গেছে, যেখানে ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের গড় সময় ছিল ১১ সেকেন্ড।
রচেস্টার অঞ্চলে বসবাসকারী ৪০ জন সুস্থ পুরুষ ও নারীদের বেছে নেয়া হয়েছিল গবেষণার জন্য। এর মধ্যে অর্ধেকের বয়স ছিল ৫০ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে, এবং বাকি অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন ৬৫ বছরের বেশি বয়সী।
অংশগ্রহণকারীদের ভারসাম্য, হাঁটার গতি, কব্জির শক্তি এবং হাঁটুর জোর পরীক্ষা করা হয়। বয়সজনিত পরিবর্তন নির্ধারণে শরীরের আকার (ওজন ও উচ্চতা) অনুসারে ফলাফলগুলো বিশ্লেষণ করা হয়।
গবেষণাটি সম্প্রতি প্লস ওয়ান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে ভারসাম্যের পরিবর্তন
মানবদেহের ভারসাম্য বিভিন্ন সংবেদনশীল সংকেত থেকে আসে, যেমন দৃষ্টিশক্তি, পেশি ও জয়েন্টে থাকা স্নায়ু রিসেপ্টর এবং কানের ভেতরের কিছু অংশ, যা দেহের অবস্থান ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রবণবিদ্যা ও কান, নাক ও গলা বিভাগের প্রধান ডেভিন ম্যাকক্যাসলিন জানান, "বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সিস্টেমগুলোর অবনতি হতে শুরু করে, যা শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রভাব ফেলে।"
তিনি আরও বলেন, "কানের ভেতরের ভারসাম্য বজায় রাখার অংশটি উচ্চ শব্দের কারণে সময়ের সঙ্গে হ্রাস পেতে পারে, ফলে শ্রবণশক্তিও কমতে পারে।"
ম্যাকক্যাসলিন বলেন, "বয়স বাড়লে কানের ভারসাম্যের অংশ ও মস্তিষ্কের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা কঠিন হয়ে যায়।"
ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাইনিসিওলজি বিভাগের প্রধান জে হার্টেল বলেন, "বয়স্কদের ক্ষেত্রে ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আমরা চাই বয়স্করা ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কিছু প্রশিক্ষণ নিন, যাতে তারা এই ধরনের বিপদ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারেন।"
গবেষণার সীমাবদ্ধতা
এ অনুসন্ধানের জন্য গবেষকরা একবারেই একটি নির্দিষ্ট সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন এবং এটি দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণ নয়, যা ক্রস-সেকশনাল গবেষণার একটি সীমাবদ্ধতা।
কফম্যান বলেন, "আরেকটি সীমাবদ্ধতা হলো মাত্র ৪০ জন অংশগ্রহণকারী নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা আরও বেশি হলে গবেষণাটি আরও শক্তিশালী হতে পারত।"
অন্য বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিংয়ের ব্যায়াম ফিজিওলজিস্ট লিন্ডন জোসেফ বলেন, "চিকিৎসকদের জন্য এই ভারসাম্য পরীক্ষাটি কীভাবে উপকারী হবে তা আরও ভালোভাবে বুঝতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।"
তিনি আরও বলেন, "এই পরীক্ষাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য এটি আরও বেশি মানুষের ওপর প্রয়োগ করতে হবে। তবে এটি একটি ভালো পদক্ষেপ।"
হার্টেল বলেন, "এটি একটি চমৎকার গবেষণা।"
রিও ডি জেনিরোর ক্লিনিমেক্স ব্যায়াম মেডিসিন ক্লিনিকের গবেষণা ও শিক্ষা পরিচালক ক্লদিও গিল এস আরাউজো বলেন, "এই গবেষণাটি এক পায়ে ভারসাম্য পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা জোরালো করে। এটি একটি সহজ পদ্ধতি যা চিকিৎসকরা রোগীর ভারসাম্য মূল্যায়নে ব্যবহার করতে পারেন।"
২০২২ সালে ১ হাজার ৭০২ জন প্রাপ্তবয়স্কের ওপর করা এক গবেষণায় আরাউজো এবং তার স-হগবেষকরা দেখেন, যারা ১০ সেকেন্ড ধরে এক পায়ে দাঁড়াতে পারেননি, তাদের সাত বছরের মধ্যে বিভিন্ন কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল বেশি।
আরাউজো বলেন, "৬০ বছর বয়স থেকে মানুষ সাধারণত ভারসাম্য হারাতে শুরু করে। এর চেয়ে কম বয়সিদের জন্য ফ্লেক্সিবিলিটি বয়সের প্রভাব পরিমাপের আরও ভালো উপায় হতে পারে।"
কীভাবে ভারসাম্য উন্নত করবেন
কফম্যান বলেন, "বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত ব্যায়াম ভারসাম্য উন্নত করার চাবিকাঠি। বিশেষত তাই চি অনুশীলন বয়স্কদের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।"
আরাউজো পরামর্শ দেন, "মানুষ দৈনন্দিন রুটিনে ভারসাম্য চর্চা করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, দাঁত ব্রাশ করার সময় এক পায়ে দাঁড়ানো, পা পরিবর্তন করে ভারসাম্য ধরে রাখা অথবা দরজা খুলতে গেলে দরজার হাতল ধরে এক পায়ে ১০ সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকা।"
কফম্যান জানান, তিনি তার ভারসাম্য ধরে রাখতে প্রতি সপ্তাহে এক পায়ে দাঁড়ানোর অনুশীলন করেন।
তিনি বলেন, "কিছু দিন আমি পুরো ৩০ সেকেন্ড দাঁড়াতে পারি, আর কিছু দিন পারি না। তবে আমি অন্তত চর্চা চালিয়ে যাচ্ছি।"
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি