ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচন: প্রথম দফার ভোটে কট্টর ডানপন্থিদের জয়, ধরাশায়ী মাখোঁর জোট
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/07/01/https_cloudfront-us-east-2.images.arcpublishing.com_reuters_wos32dtn6jkzth5fex5az322ku.jpg)
ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম জয় পেয়েছে কট্টর ডানপন্থিরা। ফলে ক্ষমতার একেবারে দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে তারা।
মেরিন লা পেন-এর অভিবাসন-বিরোধী কট্টর ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৩৩.২ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে। অন্যদিকে ২৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বামপন্থি দলগুলোর জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট। আর প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর এনসেম্বল জোট ২১ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে।
অবশ্য মেরিন লা পেনের নেতৃত্বাধীন কট্টর ডানপন্থি দল আরএন এবার প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে বলে আগেই বিভিন্ন জনমত জরিপে আভাস দেওয়া হয়েছিল।
লা পেনের শিষ্য ও আরএনের ২৮ বছর বয়সি নেতা জর্ডান বারদেল্লা বলেছেন, 'ফরাসিরা যদি আমাদের ভোট দেন, তাহলে আমি সব ফরাসিদের নেতা হতে চাই।'
এর আগে কখনও কট্টর ডানপন্থিরা ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফায় জিততে পারেনি।
মেরিন লা পেন ও জর্ডান বারদেল্লা ৫৭৭ আসনের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা, অর্থাৎ ২৮৯ আসন চান।
আগামী রোববার (৭ জুলাই) হবে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ। সেখানে কট্টর ডানপন্থিদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভবনা কম বলে উঠে এসেছে প্রাক্কলনে।
কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে ফ্রান্সে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠন করা হবে। তখন আরএনের পক্ষে তাদের অভিবাসন, কর কর্তন এবং আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2024/07/01/https_cloudfront-us-east-2.images.arcpublishing.com_reuters_hvquvvb4m5n67j5jkldmgpxj5e.jpg)
মাখোঁ এ আগাম নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা ছিল না। কিন্তু জুনে তারিখের ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে আরএনের হাতে তার জোটের পরাজয় হওয়ার পর আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে মাখোঁ বলেন, এটাই 'সবচেয়ে দায়িত্বশীল সমাধান'।
মাখোঁর এই সিদ্ধান্তকে অনেকে জুয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। এ সিদ্ধান্ত এখন তার জন্য উল্টো ফল আনছে।
এতে সৃষ্ট রাজনৈতিক উন্মাদনার প্রভাব পড়েছে ভোটে। পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটে ১৯৯৭ সালের পর এবারই সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে।
প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শেষে এনআরের ৩৯ জন পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) অর্ধেকের বেশি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্টের ৩২ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে আরএনের সাফল্যে ক্ষোভ ও হতাশা জানাতে প্যারিসে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করেছেন শত শত বামপন্থি ভোটার।
আরএনের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার খানিকটা সম্ভাবনা থাকলেও ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠনের সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। তবে সেখানেও সবচেয়ে বেশি আসন আরএনেরই থাকবে। দ্বিতীয় দফায় অন্যান্য দলের ভোট টেনে নিউ পপুলার ফ্রন্টেরও আসন বাড়তে পারে।
এদিকে আরএনকে ঠেকাতে 'বৃহত্তর' গণতান্ত্রিক জোট গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন মাখোঁ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সময় এসেছে দ্বিতীয় দফার ভোটের জন্য বৃহত্তর, স্পষ্ট গণতান্ত্রিক ও প্রজাতান্ত্রিক জোট গঠন করার।
প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আত্তাল হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কট্টর ডানপন্থিরা 'ক্ষমতার প্রবেশদ্বারে' দাঁড়িয়ে আছে—এবং 'একটি ভোটও ন্যাশনাল র্যালির ঝুলিতে পড়তে দেওয়া যাবে না'।
বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্টের নেতা জাঁ-লুক মেলেশঁ বলেন, তিনি প্রথম ধাপের নির্বাচনে তৃতীয় হওয়া প্রার্থীদের প্রার্থিতা তুলে নেবেন, যাতে দ্বিতীয় দফায় কট্টর ডানপন্থি আরএন প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ সর্বোচ্চ ভোট পায়।
ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থী আপনাআপনি দ্বিতীয় দফার ভোটে লড়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। এছাড়া নিবন্ধিত ভোটারদের ১২.৫ শতাংশ ভোট পাওয়া প্রার্থীরাও এ দফায় লড়ার সুযোগ পান। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে যিনি সর্বোচ্চ ভোট পান, তিনিই জয়ী হন।