বিদায় ফ্লপি ডিস্ক! জাপানে ফ্লপি ডিস্ক যুগের সমাপ্তি ঘোষণা
প্রযুক্তি উৎকর্ষতায় পুরনো সব যন্ত্রপাতিকে সরিয়ে জায়গা দখল করে নিয়েছে নতুন সব যন্ত্রপাতি। কিন্তু অত্যাধুনিক জাপানে এতদিন পর্যন্ত ঠিকই ছিল ফ্লপি ডিস্কের ব্যবহার। সম্প্রতি এই পুরনো স্টোরেজ ডিভাইসটিকে বিদায় জানিয়েছে দেশটি। খবর বিবিসির।
গত মাস পর্যন্তও জাপানে সরকারের কাছে ডকুমেন্ট জমা দিতে ফ্লপি ডিস্ক ব্যবহার করতে হতো। অন্তত হাজারখানেক কাজে পুরনো এই প্রযুক্তিটির ব্যবহার ছিল।
২০২১ সালে জাপানের ডিজিটাল মন্ত্রী তারো কোনো ফ্লপি ডিস্কের বিরুদ্ধে অনেকটা 'যুদ্ধ' ঘোষণা করেন। সরকারি কার্যক্রম থেকে এটিকে সরিয়ে ফেলতে তিনি জোরালো উদ্যোগ নেন। এর তিন বছর পর গত বুধবার মন্ত্রী বলেন, "ফ্লপি ডিস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি।"
মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তারো পুরনো প্রযুক্তিগুলোকে সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। এর আগে তিনি ফ্যাক্স মেশিনের ব্যবহার বন্ধে সদিচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন।
জাপানকে একটা দীর্ঘ সময় দেখা হয়েছে প্রযুক্তি জায়ান্ট হিসেবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণে যেন বেশ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন।
উদাহরণস্বরূপ, জাপানের অধিকাংশ কর্মক্ষেত্রে ইমেইলের পরিবর্তে এখনও ফ্যাক্স মেশিনের ব্যবহার রয়েছে। সরকারি অফিস থেকে এই মেশিনগুলি সরানোর পরিকল্পনা করা হলেও তা পরবর্তীতে বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে ফ্লপি ডিস্কের ব্যবহার বন্ধের খবরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা শুরু হয়েছে। এক্স (প্রাক্তন টুইটার) ব্যবহারকারী একজন বলেন, "সরকার কি এখনো ফ্লপি ডিস্ক ব্যবহার করে? এটা অনেক পুরনো (প্রযুক্তি)। আমার মনে হয় তারা বুড়ো লোকে পূর্ণ।"
এদিকে অনেকেই আবার যন্ত্রটি নিয়ে নিজের স্মৃতিচারণ করেছেন। এক ব্যবহারকারী বলেন, "আমি ভাবছি যে, ফ্লপি ডিস্কগুলি নিলাম সাইটগুলিতে (এখন থেকে) দেখা যাবে কি-না।"
ফ্লপি ডিস্কের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৬০-এর দশকে। তবে ১৯৯০-এর দশকের এটি নিজের স্থান হারাতে থাকে। কেননা তখন আরও ভালো স্টোরেজ ডিভাইস বাজারে আসতে থাকে।
সাড়ে তিন ইঞ্চির একটি ফ্লপি ডিস্ক মাত্র ১.৪৪ এমবি পর্যন্ত ডেটা সংরক্ষণ করতে পারে। এক্ষেত্রে ৩২ জিবির ডেটা সঞ্চয় করতে মোট ২২ হাজার ডিস্কের প্রয়োজন হবে।
সর্বশেষ সনি কোম্পানি ফ্লপি ডিস্ক উৎপাদন করতো। ২০১১ সালে তারা এই উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
জাপান সরকারি পর্যায়ে ডিজিটালের ছোঁয়া দিয়ে ২০২১ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ডিজিটাল এজেন্সি চালু করে। যার নেতৃত্ব দেওয়া হয় তেরোকে। তবে দেশটির প্রতিটি পর্যায়ে ডিজিটালের ছোঁয়া আনা খুব একটা সহজ নয়।
এদিকে জাপানে বহু ব্যবসায়িক কাজে এখনও সরকারি নথিগুলিকে 'হ্যানকো' নামক খোদাই করা ব্যক্তিগত স্ট্যাম্প ব্যবহার করে অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। তবে সরকার সেগুলিকে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার চেষ্টা করছে। স্থানীয় সংবাদপত্র দ্য জাপান টাইমস জানায়, মানুষ ধীরে ধীরে স্ট্যাম্পগুলি থেকে দূরে সরে আসছে।
এমনকি ২০১৯ সাল পর্যন্ত জাপানে পেজারের ব্যবহার দেখা যায়। এক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা শেষ গ্রাহক বলেন, তিনি বৃদ্ধ মায়ের সাথে সহজে যোগাযোগের জন্য এটি ব্যবহার করতেন।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান