কলকাতায় চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা, বিক্ষোভে উত্তাল নগরী
বিক্ষোভে উত্তাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা। গত শুক্রবার ভোরে আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চারতলায় ডিউটি শেষ করে বিশ্রাম নেওয়া এক শিক্ষানবিশ ডাক্তারের মরদেহ পাওয়া যায়। অভিযোগ ওঠে, ওই নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। সেই ঘটনার ন্যায় বিচারের দাবিতেই গোটা রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চলছে। খবর বিবিসি'র।
'রিক্লেইম দ্য নাইট' বা 'রাত দখল করো'— কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (১৪ আগস্ট) রাতে কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হন নারী-পুরুষ সকলে।
নারীনেত্রী রিমঝিম সিনহা এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। শুধু কলকাতা নয় ভারতের দিল্লি, হায়দরাবাদ, মুম্বাই ও পুনের মতো শহরেও ছোট ছোট বিক্ষোভ হয়েছে।
বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ এবং অজ্ঞাত ব্যক্তিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে এবং আরজি কর হাসপাতালেই হামলার ঘটনা ঘটে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালানো হয়। উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে এক পর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পুলিশের কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। কিছু বহিরাগতরা সেখানে হামলা চালিয়েছে বলে ওই মেডিকেল কলেজের এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন।
শহরের বিভিন্ন অংশে নারীদের এ কর্মসূচির সাথে একাত্মতা জানাতে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। দৃঢ়তার সাথে প্রতিবাদী চিহ্ন নিয়ে মিছিল করেন তারা। মোবাইল ফোন, মোমবাতির আলো ও টর্চের আলোয় আলোকিত ছিল তাদের মুখ। কারও কারও হাতে ছিল জাতীয় পতাকা।
মধ্যরাতের ঘড়ির কাঁটা স্পর্শ করার সাথে সাথে, যখন ভারত ৭৭ বছর স্বাধীনতার পূর্তি করল, প্রতিবাদের শব্দমালা পরিবর্তিত হল। হঠাৎ করে জাতীয় সঙ্গীতের সম্মিলিত কণ্ঠে আকাশ ভারী হয়ে উঠল। তারপর বৃষ্টি শুরু হলেও প্রতিবাদকারীরা দমে যাননি। বৃষ্টির মধ্যেই অনেকে মাথার উপরে ছাতা ধরে আন্দোলন চালিয়ে যান।
এক সাংবাদিক বলেন, 'শহরে রাতের বেলা নারীদের এত বড় জমায়েত আমরা আগে কখনো দেখিনি'।
১৩ বছরের মেয়েকে নিয়ে মিছিলে যোগ দেয়া এক নারী বললেন, 'ওকে দেখাই, একটা গণপ্রতিবাদ কীভাবে পরিবর্তন আনতে পারে। ওর নিজের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন'।
আরেকজন বললেন, 'মেয়েদের কোনো সম্মান-ই নেই। গরু-ছাগলের চেয়েও আমাদের মূল্য কম'।
আনন্দবাজার জানায়, শুরুতে 'মেয়েরা রাত দখল করো' কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল শহরের তিন জায়গা, অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস, যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ড এবং কলেজ স্কোয়ারে। তবে সেই ডাকে সাড়া দেয় গোটা পশ্চিমবঙ্গের নারীরা।
এমবিবিএস শেষ করে আর জি কর মেডিকেল কলেজে পোস্টগ্র্যাজুয়েট করা দ্বিতীয় বর্ষের এ ছাত্রী ট্রেইনি চিকিৎসক হিসেবে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত দুইটায় আরও চারজন চিকিৎসক বন্ধুর সঙ্গে তিনি নৈশভোজ সারেন।
তার জন্য নির্ধারিত কোনো বিশ্রামকক্ষ না থাকায় তিনি হাসপাতালের চারতলার একটি সেমিনার কক্ষে বিশ্রাম নিতে যান। পরের দিন সকালে, তার সহকর্মীরা পডিয়ামের ওপর অর্ধনগ্ন ও গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় তার মৃতদেহ খুঁজে পান।
পুলিশ পরে একজন হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক কর্মীকে ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করে।
তবে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার এবং অবহেলার অভিযোগ ওঠে। মামলাটি স্থানীয় পুলিশ থেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরোতে (সিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন