আন্দোলন দমনে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী 'অপ্রয়োজনীয়' বলপ্রয়োগ করেছে: জাতিসংঘ
শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী 'অপ্রয়োজনীয়' বলপ্রয়োগ করেছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) জেনেভা থেকে প্রকাশিত জাতিসংঘের 'বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও অস্থিরতা বিষয়ে প্রাথমিক বিশ্লেষণ' শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এবং সহিংসতার ঘটনা মোকাবিলায় অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। তিনি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত চলমান আন্দোলনে প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যুর খবর এবং ৫ থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে প্রায় ২৫০ জনের মৃত্যুর কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলেছে, "আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি মোকাবিলায় অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে বলে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অবৈধভাবে গ্রেপ্তার ও আটক, জোরপূর্বক গুম করা, নির্যাতন ও খারাপ আচরণ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গুরুতর বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটেছে।"
এ ঘটনায় আরও স্বাধীন তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং আরও প্রাণহানি, সহিংসতা ও প্রতিশোধমূলক কাজ বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
শেখ হাসিনার স্থলাভিষিক্ত হওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে, সহিংস "নৃশংসতা" তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল অধিকার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার একটি সুযোগ।
তিনি বলেন, "এই পরিবর্তন দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার ও পুনরুজ্জীবিত করার, মৌলিক স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে আনার এবং বাংলাদেশের সকলকে ভবিষ্যৎ গঠনে অংশীদার করার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ দিয়েছে।"
ভলকার তুর্ক বলেন, "মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা এবং ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর সাথে পুরো দেশের এই সংকট থেকে বেড়িয়ে আসবার প্রয়োজন রয়েছে।"