'মানুষখেকো' নেকড়ের আক্রমণে একের পর এক শিশুর মৃত্যু, উত্তরপ্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক
চারটি নেকড়েকে খাঁচাবন্দি করার পরেও থামেনি হামলা। ভারতের উত্তরপ্রদেশের বহরাইচে গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে ফের হানা দিয়েছে 'মানুষখেকো' নেকড়ে। খবর বিবিসির।
পুলিশের তথ্যমতে, ঘরের ভিতর ঢুকে ১২ বছরের এক ঘুমন্ত বালককে ঘাড় কামড়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে একটি নেকড়ে। পরবর্তীতে চিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্যেরা জেগে উঠলে শিকার ছেড়ে পালায় প্রাণীটি।
গত দুই মাসে বহরাইচ জেলার একাধিক গ্রামে নেকড়ের হামলার ঘটনায় এক নারী ও নয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৩৪ জন। মূলত মাহসি ব্লকের সিসিয়া পঞ্চায়েত ও আশপাশের অঞ্চলগুলিতেই গত দুই মাসে মূলত ঘটছে নেকড়ে হানার ঘটনা।
বহরাইচ জেলার নেপাল সীমান্তবর্তী কাটার্নিয়াঘাট বাঘপ্রকল্পের বাফার জ়োনে নেকড়ের উপস্থিতি রয়েছে। প্রাথমিক অনুমান, ওই নেকড়েগুলি সেখান থেকেই লোকালয়ে এসে ডেরা বেঁধেছে।
কিন্তু কেন প্রাণীগুলো মানুষের উপর হামলা চালাচ্ছে? ফরেস্ট কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জয় পাঠকের মতে, মানুষের দ্বারা কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই নেকড়ের পাল। এ ক্ষেত্রে 'প্রতিশোধের তত্ত্ব' উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি।
সঞ্জয় বলেন, ''নেকড়েদের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা আছে। কেউ যদি তাদের বাসা বা তাদের সন্তানদের ক্ষতি করে, তবে তারা মানুষের উপর প্রতিশোধ নেয়।''
সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিতে বহরাইচের রামুয়াপুর এলাকায় প্লাবিত হয়ে কয়েকটি নেকড়েশিশুর মৃত্যু হয়েছিল বলে জানা যায়। ঘটনাচক্রে তার পরেই শুরু হয় হামলার ঘটনা।
বহরাইচের 'মানুষখেকো' নেকড়েদের গুলি করে মারার জন্য ইতিমধ্যেই নির্দেশনা জারি করেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। নেকড়েদের এমন আচরণের কারণ অনুসন্ধান করতে পৌঁছেছেন দেহরাদূনের 'ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া' (ডব্লিউআইআই)-র বিশেষজ্ঞেরা।
১৯৯৬ সালে উত্তরপ্রদেশেরই প্রতাপগড় জেলায় 'মানুষখেকো' সন্দেহে কয়েকটি নেকড়েকে গুলি করে মারা হয়েছিল। কিন্তু তারা আদৌ মানুষখেকো ছিল কি-না, তা নিয়ে পরবর্তী কালে বিতর্ক দানা বাঁধে।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের 'ন্যাশনাল চিতা অ্যাকশন প্ল্যানের প্রাক্তন প্রধান ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ যাদবেন্দ্রনাথ ঝালা বহরাইচের ঘটনার জন্য নেকড়ের দল দায়ী কি-না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ''নেকড়েরা সাধারণত লাজুক প্রাণী। মানুষকে আক্রমণের নজির খুবই কম।''
এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ও শঙ্কায় দিন পার করছে ঝুঁকিতে থাকা গ্রামবাসীরা। অনেকে বাড়িতে তালা দিয়ে রাখছেন, শিশুদের ঘরের ভেতরে আটকে রাখছেন ও পুরুষরা রাতে রাস্তায় টহল দিচ্ছেন।
অন্যদিকে নেকড়েদের প্রতিরোধে প্রশাসন ড্রোন ও ক্যামেরা ও ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনটি নেকড়েকে ধরে চিড়িয়াখানায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশে নেকড়ের আক্রমণের ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। গত চার দশকে বেশ কয়েকবার এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে।
১৯৮১-৮২ সালে বিহারে নেকড়েদের আক্রমণে কমপক্ষে ১৩ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে মাত্র আট মাসের মধ্যে প্রাণীটির আক্রমণে ৩৮ জন মারা গিয়েছিল।
তবুও সার্বিকভাবে শত শত বছর ধরে ভারতে মানুষ ও নেকড়ে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করেছে বলে মনে করেন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নেকড়ের হামলা বৃদ্ধি নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বর্তমান শঙ্কিত পরিস্থিতি নিয়ে ঝালা বলেন, যতক্ষণ না আমরা এই আক্রমণগুলির পেছনে সঠিক কারণ জানতে পারি, ততক্ষণ পর্যন্ত সতর্কতাসমূহই মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ৷
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান