আইফোন ১৬ সিরিজের উদ্বোধনে যে কারণে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ শব্দদ্বয় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে
বহুল প্রতীক্ষিত ১৬ সিরিজের নতুন আইফোন উন্মোচন করেছে অ্যাপল। গত সোমবার ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনো পার্কে আয়োজিত 'ইটস গ্লোটাইম' ইভেন্টের মাধ্যমে নতুন সিরিজের এ ফোন উন্মোচন করা হয়।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে আইফোন ১৬ সিরিজের প্রতিটি মডেলেই থাকবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সুবিধা। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, দীর্ঘ দুই ঘণ্টার পুরো ইভেন্টে এই শব্দ দুটি উচ্চারণই করা হয়নি।
বরং কোম্পানিটির সিইও টিম কুক এআইয়ের পরিবর্তে ফিচারগুলোকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স হিসেবে। আগে এই সুবিধা শুধু আইফোন ১৫ প্রো মডেলে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে ১৬ সিরিজের প্রতিটি মডেলেই তা পাওয়া যাবে।
এক্ষেত্রে অবশ্য মনস্তাত্ত্বিক বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছে অ্যাপল। কেননা মানুষের সাধারণত এআইয়ের ওপর এখনো কিছুটা অবিশ্বাস রয়েছে। কিছুদিন পূর্বে জার্নাল অব হসপিটালিটি মার্কেটিং এন্ড ম্যানেজমেন্টে প্রকাশিত গবেষণায় এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, এআই চালিত প্রোডাক্টগুলো কেনার ক্ষেত্রে মানুষের মনে এখনো এক প্রকার ইতস্ততা কাজ করে। কেননা অনেক সময়ই এআই ভুল তথ্য দিয়ে থাকে।
একইসাথে বট তৈরি ও দুর্বল স্ক্রিপ্ট লেখার জন্যও এআইকে দায়ী করা হয়। আর তাই এআইয়ের পরিবর্তে 'অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স' কথাটি ব্যবহার করার মাধ্যমে ভিন্নভাবে ব্র্যান্ডিং করতে চাচ্ছে কোম্পানিটি।
আইফোন ১৬ প্রো সিরিজে উল্লেখযোগ্য আপডেটের মধ্যে একটি হলো ডিসপ্লে আকারের পরিবর্তন। যেখানে আইফোন ১৫ প্রো মডেলে ডিসপ্লে ছিল ৬.১ ইঞ্চি, সেখানে নতুন আইফোন ১৬ প্রো-তে ডিসপ্লে সাইজ ৬.৩ ইঞ্চি। আর প্রো ম্যাক্স মডেলে আগের ৬.৭ ইঞ্চির ডিসপ্লের পরিবর্তে থাকছে ৬.৯ ইঞ্চির ডিসপ্লে।
২০২০ সালে আইফোন ১২ প্রো ও প্রো ম্যাক্সের পর এবারই প্রথম আইফোনের স্ক্রিন আকারে পরিবর্তন আনা হলো। এর ফলে আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স হতে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত বাজারে আসা সবচেয়ে বড় আইফোন।
প্রসেসর হিসেবে এবার থাকছে তিন ন্যানোমিটার ট্রানজিস্টরের এ১৮ বায়োনিক চিপ, প্রসেসরটিকে 'অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স' সমর্থনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। এই চিপে বিল্ট-ইন এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) কম্পিউটিং কোরের সংখ্যা আগের তুলনায় বেশি, পাশাপাশি উন্নত নিউরাল ইঞ্জিনও আছে। এই চিপসেটটি তৈরি করেছে টিএসএমসি, যা এআই এবং মেশিন লার্নিংসহ উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার আরও সহজ করে তুলবে।
অ্যাপলের দাবি, নতুন এ চিপের কারণে আইফোনের পারফরম্যান্স এবং ব্যাটারি ক্ষমতারও দারুণ উন্নতি ঘটেছে, যা গেমিং এবং অন্যান্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কাজের জন্য বেশ উপযোগী। চিপটির জিপিইউ পারফরমেন্স অবশ্য আগের এ১৭ চিপের মতোই। অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে আইফোন ১৬ সিরিজে থাকছে আইওএস ১৮।
১৬ সিরিজের ফোনগুলোতে একটি ফিজিক্যাল 'ক্যামেরা কন্ট্রোল বাটন' রয়েছে। অ্যাপল জানিয়েছে, এই বাটনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা এক ক্লিকেই ক্যামেরা চালু করা, ছবি তোলা এবং ভিডিও রেকর্ড করা শুরু করতে পারবেন। নতুন এ ক্যামেরা বাটনের সাহায্যে ব্যবহারকারীরা কোনো রেস্টুরেন্টের ছবি তুলে সেটার তথ্য কিংবা কুকুরের দিকে ক্যামেরা তাক করে তার প্রজাতি সম্পর্কেও জানতে পারবেন। তাছাড়া এটি টাচ সেন্সিটিভও হবে। অর্থাৎ এর সাহায্যে জুম ইন-আউট করার জন্য বাম এবং ডানদিকে সোয়াইপ করা যাবে।
আইফোন ১৬ প্রো মডেলে ৪কে রেজোলিউশনে সর্বোচ্চ ১২০ ফ্রেম পার সেকেন্ডে ভিডিও ধারণ করা যাবে। ৪৮ মেগাপিক্সেলের ফিউশন ক্যামেরা এবং ২এক্স অপটিক্যাল জুম, ব্যবহারকারীদের নতুন ক্যামেরার অভিজ্ঞতা দেবে। আল্ট্রা ওয়াইড ক্যামেরা দিয়ে কাছের ম্যাক্রো শট থেকে শুরু করে দূরের প্রশস্ত দৃশ্য ধারণ করা যাবে। সব মিলিয়ে, এটি যেন আপনার পকেটে চারটি লেন্স থাকার মতো সুবিধা। এছাড়া, স্প্যাশিয়াল ক্যাপচার ফিচারের মাধ্যমে আপনি থ্রিডি ফটো ও ভিডিও ধারণ করতে পারবেন, যা অ্যাপল ভিশন প্রো দিয়ে দেখা যাবে।
আইফোন ১৬ এবং ১৬ প্লাসের দাম পড়বে যথাক্রমে ৭৯৯ ও ৮৯৯ ডলার। আর আইফোন ১৬ প্রো এবং প্রো ম্যাক্সের দাম পড়বে যথাক্রমে ৯৯৯ ডলার ও ১১৯৯ ডলার। এই সিরিজে পাঁচটি রঙে ফোনগুলো পাওয়া যাবে— কালো, সাদা, গোলাপি, টিল, এবং আলট্রামারিন। প্রি-অর্ডার শুরু হবে ১৩ সেপ্টেম্বর এবং বাজারে পাওয়া যাবে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান