ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে দিলে রাশিয়া কী ধরনের পালটা ব্যবস্থা নিতে পারে?
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ভূখণ্ডে পূর্ণ আক্রমণ শুরু করে। এরপর থেকে, ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর ও যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিদিন বোমাবর্ষণ চালাচ্ছে রাশিয়া।
রাশিয়ার বিমান থেকে ছোড়া অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ও গ্লাইড বোমা ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনা, আবাসিক ভবন, জ্বালানি অবকাঠামো এবং হাসপাতালগুলোতে আঘাত হানছে। কিয়েভের দাবি, এসব হামলার উৎসস্থলে আঘাত করার অনুমতি না থাকায় তাদের আত্মরক্ষা সক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার পশ্চিমা মিত্রদের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি চাচ্ছেন, তার মতে এটিই যুদ্ধের সমাপ্তির একমাত্র উপায়। কিন্তু যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ার আশঙ্কায় এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জন্য কোনো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি।
অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমতি দিলে তা যুদ্ধে ন্যাটোর সরাসরি অংশগ্রহণ হিসেবে গণ্য হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, পশ্চিমা দেশগুলো যদি ইউক্রেনকে রাশিয়ায় আঘাত হানার জন্য দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়, তাহলে ভ্লাদিমির পুতিনের সামনে কী পথ খোলা আছে?
সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটেনের সামরিক স্থাপনায় হামলা কিংবা নিজেদের শক্তির জানান দিতে পারমাণবিক পরীক্ষা করার মতো যেকোনো পদক্ষেপই নিতে পারে রাশিয়া।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ওয়াশিংটনে বৈঠক করেছেন। কিন্তু বৈঠকে ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে মার্কিন আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস) ও ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
হামবুর্গের ইনস্টিটিউট ফর পিস রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসির অস্ত্র বিশেষজ্ঞ উলরিখ কুহন বলেছেন, পশ্চিমাদের ভয় দেখানোর জন্য পুতিন পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতে পারেন।
তিনি বলেন, "এটি হবে আগুনে ঘি ঢালার মতো, সংঘাত আরও বাড়িয়ে তুলবে। যদি পশ্চিমারা তবুও না থামে, তাহলে পুতিনের হাতে আসল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বাইরে আর কোনো বড় বিকল্প খোলা থাকবে না।"
রাশিয়া ১৯৯০ সাল থেকে কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। কিন্তু রাশিয়া এখন পারমাণবিক পরীক্ষা চালালে তা পরিস্থিতিকে আরও বিগড়ে দেবে এবং এতে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বড় ধরনের ধাক্কা খাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অস্ট্রিয়ার ইনসব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ গেরহার্ড ম্যাংগটও মনে করেন, রাশিয়া প্রতিক্রিয়া জানাতে যেকোনো ধরনের পারমাণবিক বার্তা দেয়ার চেষ্টা করবে, যদিও তার মতে এর সম্ভাবনা খুব কম।
তিনি বলেন, "রাশিয়া পারমাণবিক পরীক্ষা করতে পারে। তারা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। পূর্বাঞ্চলে কোথাও একটি ছোট পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা দেখাতে পারে যে, প্রয়োজনে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে প্রস্তুত।"
রাশিয়ার জাতিসংঘ দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, যদি ন্যাটো ইউক্রেনকে দীর্ঘ-পাল্লার অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়, তবে তা সরাসরি পারমাণবিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, "আপনাদের এটি ভুলে যাওয়া উচিত নয় এবং এর ফলাফল নিয়ে ভাবা উচিত।"
বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তি রাশিয়া বর্তমানে তার পারমাণবিক নীতি পুনর্মূল্যায়ন করছে—যাতে ন্যাটোর ওপর সীমিত পারমাণবিক হামলা চালানোর সুযোগ রাখা যায়।
প্রাক্তন ক্রেমলিন উপদেষ্টা সের্গেই মার্কভ বলেছেন, যদি ব্রিটেন ইউক্রেনকে স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেয়, তবে মস্কো ব্রিটেনকে সরাসরি আক্রমণের জন্য দায়ী করবে।
তিনি বলেন, রাশিয়া হয়ত ব্রিটিশ দূতাবাস বন্ধ করবে এবং ব্রিটিশ ড্রোন ও যুদ্ধবিমানকে আঘাত করতে পারে, বিশেষ করে কৃষ্ণ সাগরের ওপরে। এমনকি পোল্যান্ড বা রোমানিয়ায় থাকা এফ-১৬ বিমানকেও লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পুতিনের সতর্কবার্তা বারবার দেখানো হচ্ছে, যা বোঝাচ্ছে যে, তিনি এই বিষয়ে কিছু করবেন।
মার্কভ বলেন, পশ্চিমারা ধীরে ধীরে ইউক্রেনকে সাহায্য বাড়াচ্ছে, কিন্তু এখন তারা যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, তা রাশিয়ার কাছে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে দেখা হবে।
প্রো-ক্রেমলিন নেতা সের্গেই মিরোনভ বলেন, "পশ্চিমাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা রাশিয়ার সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ চায় কি চায় না।"
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন