রাশিয়াকে হারানোর বিষয়ে সন্দেহ জাগছে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মনে
রাশিয়ার সঙ্গে গত ৪ মাসের যুদ্ধে ইউক্রেন নিজের যে সমস্ত অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, তা আবারো ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে কিনা- এ বিষয়ে শঙ্কিত হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনকে ভারী ও অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করলেও রাশিয়ার কাছে নিয়ন্ত্রণ হারানো অঞ্চল ফিরে পাওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন তারা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কর্মকর্তারা তাদের এমন সংশয়ের কথা জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ইউক্রেনের জয়ের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা উচিত কিনা, আনলেও তা কীভাবে- এনিয়ে অভ্যন্তরীণভাবে বিতর্ক শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টারা। কারণ রুশ বাহিনীর চাপে প্রতি মুহূর্তে কোণঠাসা হচ্ছে ইউক্রেন।
তবে এর অর্থ এই নয় যে, সংঘাত শেষ করতে রাশিয়ার দখল করে নেওয়া কোনো অঞ্চল অনুষ্ঠানিকভাবে ছেড়ে দিতে ইউক্রেনকে চাপ দেবে যুক্তরাষ্ট্র। বরং বছরের শেষের দিকে, ইউক্রেনীয় বাহিনীর সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা উল্লেখযোগ্য অঞ্চল দখল করতে সক্ষম হবে কিয়েভ- এমন আশা করছে ওয়াশিংটন।
আলোচনার সঙ্গে জড়িত মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের (কংগ্রেস) একজন সহকারী সিএনএনকে বলেন, "ইউক্রেন এই অঞ্চলগুলো উদ্ধার করতে পারে কিনা- তা অনেকাংশেই নির্ভর করছে আমরা তাদের কতটা সমর্থন দিতে পারব তার ওপর।"
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইউক্রেন আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ন্যূনতম ৪৮টি মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম চেয়েছে, কিন্তু পেন্টাগন থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৮টি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
তবে মার্কিন প্রশাসনের অনেকেই ততটা চিন্তিত নন। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী আবারও শক্তহাতে মোকাবেলা করবে রুশ বাহিনীকে। ঠিকভাবে যেভাবে হামলার শুরুতে কিয়েভকে তারা রক্ষা করেছিল।
তবুও ইউরোপে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক করার সময়েই ইউক্রেন বিষয়ে শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তাদের হতাশামূলক মন্তব্য এসেছে। অথচ জি-৭ এর বৈঠকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন অন্যান্য নেতাদের ইউক্রেনের প্রতি সশস্ত্র সমর্থন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৈঠকে বক্তব্য রাখার সময় বাইডেন বলেন, "আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে। পুতিন শুরু থেকেই হিসেব করে আসছেন, কোনোভাবে ন্যাটো এবং জি-৭ এর মধ্যে ফাটল ধরানো যায় কিনা, কিন্তু আমরা তা হতে দেইনি এবং আমরা তা হতে দেবও না।"
মার্কিন প্রশাসন গত সপ্তাহে ইউক্রেনের জন্য আরও সাড়ে ৪০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এবারের প্যাকেজে রয়েছে, রকেট লঞ্চ সিস্টেম, আর্টিলারি গোলাবারুদ ও টহল বোট। এছাড়া, ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য 'নাসামস' (এনএএসএএমএস) নামের একটি অত্যাধুনিক ভূমি থেকে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা ও পশ্চিমা গোয়েন্দাদের সঙ্গে জড়িত একটি সূত্রের মতে, সংঘাতে হারানো অঞ্চল ইউক্রেন আবার ফিরে পাবে, এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। বিশেষ করে এ বছরের মধ্যে, যেমনটি গেল সোমবার (২৭ জুন) দাবি করেছিলেন জেলেনস্কি।
এ ব্যাপারে সেন্টার ফর নেভাল অ্যানালাইসিস-এর রুশ সমরবিদ মাইকেল কফম্যান বলেন, "২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইউক্রেন তার হারিয়ে ফেলা অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে পারবে কিনা- তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। এক্ষেত্রে যদিও সম্ভাবনা আছে, তবে তা একেবারেই অনিশ্চিত। যদি ইউক্রেন এতদূর যেতে পারে, তাহলে সম্ভবত বাকি লক্ষ্যগুলোও পূরণ করেত পারবে। কিন্তু যদি না পারে, তাহলে কীভাবে বিজয় অর্জন করা যায়- তা পুনর্বিবেচনা করতে হবে।"
দোনেৎস্ক অঞ্চলের সামরিক প্রশাসনের প্রধান পাভলো কিরিলেনকো গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, রুশ বাহিনী এখন দোনেৎস্কের পূর্বদিকে অর্ধেকেরও বেশি অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। কয়েক সপ্তাহের যুদ্ধের পর শুক্রবার ইউক্রেনের বাহিনী প্রধান পূর্বাঞ্চলীয় শহর সেভেরোদনেস্ক থেকে পিছু হটেছে বলে জানা গেছে।
রাশিয়ান বাহিনী গত সপ্তাহে লিসিচানস্কের আশেপাশের অঞ্চল দখল করেছে। তাছাড়া, পূর্ব লুহানস্ক অঞ্চলের শেষ শহরটি এখনও ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত। ইউক্রেনের সামরিক কমান্ডাররা এখন এই আশঙ্কায় আছেন যে, পশ্চিমদিকের অঞ্চল রক্ষার জন্য এই এলাকা থেকে সরে যেতে হতে পারে তাদেরকে।
ইতোমধ্যে, পশ্চিমাদের আরোপিত কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে তেলের দাম আকাশচুম্বী হওয়ার রাশিয়ার জ্বালানি বিক্রিলদ্ধ রাজস্ব বেড়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা সোমবার বলেছিলেন, রাশিয়া যাতে তেল থেকে আরো লাভ না করতে পারে সেই লক্ষ্যে তারা পণ্যটির দাম কমানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু, কীভাবে এবং কবে তা করা হবে সে বিষয়ে তারা কিছু জানাননি।
এদিকে সোমবার জি-৭ নেতাদের উদ্দেশ্য করে জেলেনস্কি বলেন, তিনি চান এই যুদ্ধে যাতে ইউক্রেন জেতে, এবং যুদ্ধ যাতে চলতি বছরের মধ্যেই শেষ হয়।
- সূত্র: সিএনএন